সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬

বাউন্ডুলে

আজ একটা নৌকো বাওয়ার দিন।
নীল একটা পানসী নায়ে
কাকচক্ষু ঠান্ডা জলে
ভেসে যাবার দিন ।

আজ একটা ঝিল সারসের দিন।
সবুজ একটা পদ্মঝোঁপে
নীল সাদা সব ফুলের 'পরে
ক্যামোফ্লশ্জের দিন।

আজ একটু একলা হবার দিন।
সাদা মেঘ মাথায় রেখে
বৈঠেটাকে জিরুতে দিইয়ে
পানসীটাতে গা এলিয়ে
শুয়ে থাকার দিন ।

আজ একটা ব্যাকুল গোপন দিন
জলে রোদে চোখে
গন্ধমেখে
তেঁতে থাকা গ্রীষ্ম বেশে
'মন ভাল না' -র দিন ।

আজ,
একটা স্পর্শ পাবার দিন।
জগৎ সংসার শিকেয় তুলে
লাজলজ্জা বিলিয়ে দিইয়ে
স্পর্শ পাবার দিন।
স্পর্শ পেয়ে অবশ হবার দিন।

আজ ঠিক একটা, নৌকো বাওয়ার দিন ।



ফিসফিস

তুমিও একদিন
কিশোরী-ভোরে,
অভিমান চোখে নিয়ে
গভীর হয়েছো ।।

ঘাসের মাদুরে জমা
বিন্দু বৃষ্টি ।।

ঘাসবন চুঁইয়ে
জমে থাকা
সেই এক ভীষণ গোপন,
তুমি।
রয়েছো ।।

বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬

অবগাহন

একটা ঝুম বৃষ্টি দেবে ?
বদলে একটা ডুবো নদী ।
নদীর নাম জল-ছোঁয়া
বৃষ্টি হবে নেশায় পাওয়া ।

নদীর পারে একা একা
চীৎকারে তারে ডাকা
কন্ঠ ছেঁড়া আমার জল
উন্মাদ কিছু হাওয়ার দল ।

শুনবে কিনা শুনবে কেউ
মাতাল যত নদীর ঢেউ
কন্ঠ মোর রইলো চাপা
দাঁপিয়ে বেড়ায় বৃষ্টি ক্ষ্যাপা !

তারে ছুঁতে হাত বাড়াই
ঝাপটা বিষ্টি শূন্যতাই।
সন্ধ্যেটুকু জমিয়ে রাখি
ওতেই আমি মত্ত থাকি ।
মন ডুবোনো সন্ধ্যেতে
চুঁইয়ে ফোঁটায় গা পেতে

লক্ষ্মীছাড়া  জলফোঁটা
সাক্ষী রইলো ক্ষাণিকটা
সেই সেদিনের
ঝুম বৃষ্টিতে
এই তোমায় ছোঁয়া
নদীতে ।

অনুধাবন (২)

জল দিঘী
আর জল জোছনার
তফাৎ টা কী ?
নেই তো তফাৎ !
দুজনার-ই মনে শুধু
"কি নেই-কি নেই"
এই হাহাকার ...

অনুধাবন (১)

খরকুটোর এই একলা চরে
তোমার মতো নদীর 'পরে
আমার বসবাস ।।
হাওয়ায় ভাসে সাগর পাখি
নিত্য তাদের মাখামাখি
আমার হতাশ্বাস ।।

দাবী দাওয়া

এখন আর ভুলের বশেও
তালপুকুরে
বিল ঝিলেতে
ফুল তুলিনা ।
কোন এক তাপ দুপুরের,
ফাঁক বাতাসে-
প্রিয় কিছু ফুল গুলো সব
হারিয়ে গেল ।
সাদা-সবুজ শাপলা  সেসব
খোঁজ করি না ।।

অস্ফুটো অভিমান

উপায় কী? নির্ঘুমেতে মিথ্যাচারে
পালানোটুকু সেঁচে রেখে যত্ন ভরে
জোনাকী-ই মিশ্ মাতালে
খোলা আলোয় চুপ আড়ালে
শিস্ দিলো যে ?!

আমার ইচ্ছে করে

আমার ইচ্ছে করে
নায়ের 'পরে  জল-জোছনা হই ।
যে নায়েতে বৈঠে হাতে
তুই চেয়ে রোস উদাস রাতে
তেমনি একা নির্জনেতে
সাগর পাখির পাখনা মেলে
ছই-য়ে বসে রই ।
নিম নিম হিমের রাতে
পিলসুজের উষ্ণতাতে তোর ভাবনা হই ।
আমার ইচ্ছে করে নায়ের 'পরে
জল-জোছনা হই ।

সাধ

বহুদিন তোর ওই হাতে হাত রেখে
নির্জন পথে হাঁটবো বলে - সাধ ছিল।
ঝুঁকে পড়া গাছেরা বন্ধু হয়ে ঝুঁকি নেবে
আমাদের একলা করার।
কিংবা ; ঝুম বৃষ্টিতে অজুত নিজুত লোকের ভীড়ে
নগর কোলাহল অগ্রাহ্য করে
হেঁটে যাবো পাশাপাশি।
বহুদিন বহুবেলার সাধ আমার -
শরৎ মেঘেদের তৈলচিত্রের নীচে হেঁটে
মন দেবো তোর ঝগড়ায় !
সব ছেড়ে ১টা সাফ কথা বলি শোন্
১টা নীল নদী রাখা আছে এখনও তোর নামে
প্রায়ই পৃথিবী ছেড়ে পড়ে থাকি, একা আমি যেখানে ।
রাগের মুহুর্তে তোর ঝটকায় আদর চাইবার মতোই
হাওয়া বদলায় সে নদীর তীর ।

সাধ ছিলো -
এই আমার এক জনম আমি তোকে দেবো
বিশ্বাস কর বড় সাধ ছিলো ।

লোভী

অসম্ভব ইচ্ছে গুলো মনে এলে
মন খারাপ লাগে ,
এই যেমন ধরো
নিস্তব্দ্ধ সবুজ উপত্যকায় দাঁড়িয়ে
পেঁজা মেঘেদের ছোঁবার লোভ
আমার বহুদিনের !

যত্নে ও মন খারাপে

আজকাল আমি ঘুড়ি উড়াই
যত্নের ও মন খারাপের
মেঘেরা তাচ্ছিল্য করে
সে ঘুড়ি ভেজায় ।।

আর আমার শত স্নেহের
নাটাইটাকে ভর করে
সাদা সূতোর ১টা সম্ভাবনা
দাঁড়িয়ে থাকে ; আকাশমুখী ।
আড়াআড়ি;     ধার কাটানো ।
শূন্য নামের নিত্য হাওয়ায় ।

কাঁচ আকাশ

নক্ষত্র বিন্দুর এ কাঁচ আকাশটা
কিছুদিন হলো        জলে ভেজে না
তল আঁধারি চা-বাগানের
চাপ চাপ সৌন্দর্যে
কিছুদিন হলো         মন লাগেনা ।


তবে কি ছায়াবৃক্ষেরা সব পাড়ি জমায়
একলা নদীর ধারে ?
রাত নিঝুমে
অন্ধ্যকার ছেঁকে হাওয়ায় ~
জোনাকীরা বসত-ভিটে ছাড়ে ।


আর রাত পাখির পালক
পিছলে পড়ে ঘুমে !


গভীর মমতায়
কাঁচ আকাশ তখন
থমকে চায়
চেয়ে থাকে
ঘাসে -
পিঁপড়ে ঘরে -
কি এক বিষণ্ণ নেশায় !