শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯

পুঁ ঝিক ঝিক

                                    (১)

ট্রেনে  যেতে যেতে কতই না গল্প পড়ে পড়ে , দেখে দেখে যাত্রাটা পাড়ি দেয়া যায়। শুধুই  ট্রেন না অবশ্য। একটা ভ্রমণ মানেই কিন্তু তাই।
এই যেমন আমি এখন ট্রেনে বসে আছি।  ট্রেন  আর আমি যাচ্ছি এ মুহূর্তে একটা গ্রামের ভিতর দিয়ে। বাংলার গ্রাম। যেমন হয়।

ট্রেনের জানালার পাশে বসে দুলকি চালের 'দোদুল দুল-দোদুল দুল' করতে করতে শরীরের ছন্দের সাথে সাথে মনটাও যে একটা ছন্দ নিয়ে নিজের মতো করে চারপাশটা পর্যবেক্ষন করতে করতে চলতে থাকে , এর একটা নিজস্ব বাৎসল্য আছে। একটা দর্শন আছে। দর্শনই  বৈকি! সকল কিছু দর্শন করে করে যাওয়া। ট্রেনের এই এতটুকু জানালা দিয়ে আকাশ পানে দৃষ্টি দিতে এই এতটুকুন বেগ পেতে তো হয় না।  এই মস্ত আকাশটা কি অবলীলায় ট্রেনের ছোট্ট জানালায় ধরা দেয় । কেমন ঝুঁকে মাথার ওপর বিশাল এক আদিগন্ত সামিয়ানা টাঙিয়ে রেখে আকাশটাও যেন দূ-রে কোথাও দিগন্তপানে চেয়ে থেকে, উদাস হয়।

আজ শরতের চৌদ্দ।  আমার সিটের পাশে এই ছোট্ট  জানালার বিশাল আকাশের ক্যানভাসে হুড়মুড় করে মেঘেরা পাল তুলে বেরিয়ে গেছে আকাশ সমুদ্র পাড়ি  দিতে। আমি আয়েশ করে নাটক দেখতে বসলাম। যেন গ্রীকদেশের ওডিসিয়ুস আবার সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েছে। তবে এবার তার সাথে রয়েছে  তার সেই বিশ্বস্ত বন্ধুরা, নাবিকেরা, যোদ্ধারা। কেউ নিহত হয়নি যেন। নৌবহরে তার পাশাপাশি আরো একটি শক্তিশালী যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে পাল তুলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে তালে তালে এগিয়ে চলেছে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র টেলেমাখুস ।টেলেমাখুস  দাঁড়িয়ে আছে জাহাজের মাস্তুলের উপর এক পা রেখে আকাশ পানে মুখ পেতে। শরীরে তার নব্য  যৌবনের পেশির  উপস্থিতি । চোখে তার পিতার সাফল্যের গর্বের ঝিলিক তারই  সাথে এত বছরের প্রতীক্ষিত মা এর ভালোবাসা বাড়ি ফেরার প্রশান্তি। চারপাশে আজ দামামা। কিন্তু এ দামামা যুদ্ধের নয়।  শুধুই আনন্দের।  প্রশান্তির।  সুখের আর নিশ্চয়তার । আর ওডিসিয়ুসের নিজের নৌযানে আছে এবার তার  প্রানপ্রিয় সঙ্গিনী পেনেলোপ।  হঠাৎ দেখে যুদ্ধ বহর  মনে হলেও আসলে তো তারা বেড়িয়েছে ভ্রমণে। দশ বছর পর ওডিসিয়ুসের ইথাকা প্রত্যাবর্তনের উৎসব উদযাপন। ওডিসিয়ুসের আর পেনেলোপের নৌযানের পাল গুলোর আকার দেয়া হয়েছে পেনেলোপ এর কেশের অনুকরণে।  রাত জেগে উঁচু পাহাড়ের  প্রাসাদে নিজ কক্ষের জানালা খুলে পাথরের কার্নিশে বসে জোৎস্নার চাঁদ আর নিচে অবস্থিত সমুদ্রের নীল জলের নোনা গন্ধে ভরা, ভারী হু হু বাতাসে যখন পেনেলোপ মেলে ধরতো তার হৃদয়ের আকুতি~ গুন্ গুন্ করে বিরহী গান ধরতো তার প্রাণ প্রিয় ওডিসিয়ুসের জন্যে। তখন তার দীর্ঘ সোনালী কেশরাশি বেদনার সুরে সুরে বাতাসে উড়ে উড়ে চুলের ডগায় ডগায় ভর করে, আকুতি জানাতো নিঝুম নির্জন রাত্তির কে।  ওডিসিয়ুসের  প্রতীক্ষায়।  সেই মেঘসম কেশের অনুকরণে সেজেছে যেন মেঘেরই  তৈরী নৌকোর পালেরা আজ। ওডিসিয়ুস ঠিক টের পেতো তার প্রিয় পেনোর বসে থাকাটা। সমুদ্র দেবতার অভিশাপে দিকশূণ্য নাবিকের মতো যখন অসহায় অস্থির ওডিসিয়ুস তারার আলোয় অন্ধকার সমুদ্রের দিকে মাঝরাত্তিরে শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকতো। তখন মনের  চোখে সে ঠিক দেখতে পেতো পেনেলোপকে । এমন কি জ্ঞানের দেবী মহারূপসী এ্যাথেনার হঠাৎ মিষ্টি ধীর কণ্ঠের উপস্থিতিও ওডিসিয়ুসকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলিয়ে দিতে পারতোনা, বুক জুড়ে থাকা পেনোর উদাস বসে থাকার চিত্রটি। বরং এ্যাথেনার  উপস্থিতি কি ভীষণভাবে আরও স্পষ্ট করে দিতো তার প্রাণের চাইতেও অধিক প্রিয় ভালোবাসার মানুষ পেনোর শূন্যতাটুকুকে !  চিরচেনা কণ্ঠের কান্নার সুরের মতো বাতাস হু হু করে বয়ে যেত ওডিসিয়ুসের নৌকোর পাল ঘেঁষে।
আজ এসব অতীত।  ভাবতেই ওডিসিয়ুসের বুকের ভেতরটা ভেড়ার নরম উলের উষ্ণতার একটা ছোঁয়া পেলো যেন ।

... সেটাই । মহাকবি হোমার তার মহাকাব্যে এ দৃশ্য ধারণ করুন আর নাই বা করুন আমি-পাঠকের মনে আর চোখের সামনের আকাশমঞ্চে মহাকাব্য ওডিসির এই দৃশ্য এই মুহূর্তে কিন্তু স্বগর্বে স্বশরীরে উপস্থিত !

মজার ব্যাপার হচ্ছে আকাশের মেঘেরা যে গল্প বানায়। যে নাটকীয় দৃশ্যপটের আবির্ভাব  ঘটায়, তা মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টায়। এর কোনো মাথা মুন্ডু নেই।  নিয়ম নীতি নেই।  আছে শুধুই শিশুর মতো স্বাধীনতা। আপন মনে খেলার ফূর্তি। খিল খিল হাসি। কান পাতলে, চাইলে সে শব্দ শোনাও যায়!

খিল খিল হাসি কথাটা মনে আসার সাথে সাথেই দেখি কোত্থেকে গ্রীক নৌবহরের লেজ ধরে নিজের লেজ নাচাতে  নাচাতে  এক দল সখি নিয়ে এসে দৃশ্যপটে উপস্থিত এক রাজকুমারী মৎস্যকন্যা। স্ফূর্তি দিয়ে অভিষেক হলেও, ধীরে ধীরে উচ্চ হর্ষ-বিকাশ কেবলই একটা হাসির দ্যুতির আমেজ হয়ে গা ভাসিয়ে আকাশ সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে আরম্ভ করলো। গোটা আকাশটা হঠাৎ কেবল একটা মিষ্টি মুচকি হাসির মুখচ্ছবি হয়ে ভেসে রইলো । দেখে আমিও মনে মনে না হেসে পারলাম না। পাছে আমার এই মনের স্ফূর্তি ঠোঁটে এসে পড়ে আর আমি সহযাত্রীদের কাছে "পাগলের সুখ মনে মনে" উপাধি পেয়ে যাই , তাই মনে মনেই প্রসঙ্গ  পাল্টাতে আমি এবার মাটির দিকে চোখ ফেরাই । যত দূর দেখা যাচ্ছে শুধুই ধান ক্ষেত। কচি সবুজ ধানের ক্ষেতের ওপর থেকে থেকে ছায়া।  থেকে থেকে রৌদ্র। আর মেঘ রৌদ্রের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। কি যে মজার এক দৃশ্য!

আবার খানিকটা গ্রাম পাড়ি দেবার পর নতুন গ্রাম। নতুন ধানক্ষেত। দেখি এখানে মেঘ আর সূর্য বৌচি খেলছে! সেটা কিরকম? দেখি বিশাল ধানি জমির ঠিক মাঝখানটাতে একটা ছোট্ট ছনের ঘর। কাঁচাপাকা সবুজের বিস্তীর্ণ ক্ষেতের ঠিক মধ্যখানে সোনালী খড়ের ছাউনি এবং বাদামি বেতের দেয়াল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ডিপ টিউবওয়েলের আবাসস্থল, এই ছনঘর। বৌচির বৌ তিনি। আর পুরো বিস্তীর্ণ ক্ষেত জুড়ে ছড়িয়ে  আছে রৌদ্র।এক ঠায় তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।গতিবিধি বোঝার চেষ্টায়। এদিকে ঠিক ছোট্ট কুঁড়েঘরটির ওপর এক টুকরো মেঘ ছায়া হয়ে বসে আছে।এক্ষুনি যেন  বুক ভর্তি দম  দিয়ে ছুট দিবে রোদ্রের দলবলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আউট করার জন্য। দেখে এবার আমার ঠোঁট আর আকর্ণ বিস্তৃত না হয়ে থাকতে পারলোনা।
হেডফোনে রবীন্দ্রসংগীত এর অ্যালবামটা চালানো ছিল। যদিও অন্য গান বাজছে তবু মনের মধ্যে "আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরির খেলা রে ভাই ~ লুকোচুরির খেলা " কথাটা উঁকি দিলোই।  রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এমন কি কোনো মানবিক আবেগ কে বাদ দিয়েছেন তাঁর গানে, কবিতায়, ছোট গল্পে প্রবন্ধে অথবা উপন্যাসে ? যা-ই ভাবতে যাই না কেন ঠিক মনের আবেগ বুঝে বুঝে কোনো না কোনো গান, কোনো না কোনো কবিতা বা চরিত্রের ডায়ালগ ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় ! অদ্ভুত! সাধে কি আর এই লোকের প্রেমে পড়ি বার বার ! যে মনের ভিতর ঢুকে পড়ে জনসম্মুখে দাঁড়িয়ে মনের কথা বলে যান! যেমন সূক্ষতা বোধ  তেমনই ভদ্রতাবোধের বলিহারি! মনের কথা অমন হড়বড় করে নির্দ্বিধায় লোকসম্মুখে বলা যায় নাকি ?! সেই তিনি-ই প্রথম শিখিয়ে দিলেন যে, যায়। আর এটাও একটা শিল্প।

আমার বন্ধু যূথী  বলে, “ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ এসব লিখেছিল। কি সুন্দর প্রেমে পড়লে নিজের কথা সুরে সুরে বলে দেয়া যায় এ্যানোনিমাসলি“ সহেনা যাতনা দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে” । তবে লোকটা একটু অসভ্যই বটে । যখন তখন মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মনের সংবেদনশীল থেকে সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে দেয়! এর কোন মানে হয় ?! “

হঠাৎ করেই যূথীকে খুব মনে পড়ছে। ট্রেন তো ছুটছে একটা নির্দিষ্ট গতিবেগে। একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর আমার মন? ট্রেন, ট্রেন থেকে জানালা, জানালা থেকে আকাশ, আকাশ থেকে গ্রীসে, গ্রীস থেকে ধানক্ষেতে, ধানক্ষেত থেকে কিভাবে কিভাবে ময়মনসিংহে। যূথী  বদলি হয়ে চাকরি সূত্রে এখন ময়মনসিংহে। বেশিদিন হয়নি গেছে। আচ্ছা মনের গতিবেগ প্রতি ন্যানোসেকেন্ডে কত আলোকবর্ষ পাড়ি দেয় ? তার কি কেউ সঠিক হিসেব জানে?







                                    (২)

আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে যুগ যুগ ধরে যে এক অধিবিদ্যার চর্চা চলে আসছে । নিজেকে  জানার। নিজের অস্তিত্বকে বোঝার। নিজের সঙ্গে নিজের বসবাস করবার । নিজের ভিতরের নিজেকে সন্ধান করবার জন্য যে খনি,  যে মায়া, যে মহাকাশ আমাদের নিজেদের ভেতরে,  বিধাতা ছোট্ট একটা বীজের মতই আগুনের একটা ছোট্ট স্ফুলিঙ্গের মতই  গুঁজে দিয়েছেন, তাকে চেনা, খনন করা, ফুঁ দিয়ে তাকে নেড়েচেড়ে দেখা, শ্রদ্ধা করে তাকে ভালবেসে,  তার সাথে নিত্য নৈমিত্তিক বসবাস করবার যে নির্যাস আমরা চাইলেই পেতে পারি । সেই উৎস , সেই খনির খোঁজ আমরা কজন করি?

এই অধিবিদ্যার আধ্যাত্যবাদ এর একটা খুব মজার অংশ আমরা প্রায়-ই কিন্তু নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে নিজের অজান্তেই বহুবার উপলব্ধি করি । এ যেমন ধরা যাক টেলিপ্যাথি । যার বাংলা অর্থ অভিধানে খুব সহজ সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করা।
"Telepathy / noun/ বিশেষ্য / মন জানাজানি; শব্দের বা সংকেতের ব্যবহার না করিয়া ভাবধারার যোগাযোগ । "

এই মন জানাজানি বিষয়টা বড়ই  অদ্ভুত কিনা ! যার  কথা মনে পড়ছে  যাকে নিয়ে ভাবছি তারও  ওপাশ থেকে বহুদূরে বসে আমার কথাই মনে পড়ছে । যেটা  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোগাযোগ,  মার সাথে তার শিশুর । তাঁর সন্তানের কোন  অসন্তোষ কোন অসুবিধা কোন বিপদের অশনি সংকেত মা যেন কেমন করে টের  পায়! স্বর্গের কোন দ্যূত চুপিচুপি এসে তাঁর কানেকানে  ফিসফিস করে বলে যায় যেন! কিংবা যে নারীর ছেঁড়া ধন সেই নাড়িতেই কোথাও যেন  কি টান পড়ে বলে,  এরকমটা হয়?
আমার অভিজ্ঞতায় আমি এও দেখেছি পালক মা-রাও ঠিক একইরকম মন যোগাযোগ গুনের অধিকারী হন। আসলে যে মুহূর্ত থেকে একজন মা নিজেকে মা হিসেবে জানতে শুরু করেন তা গর্ভধারিণী হউন আর দত্তক নেয়া মাতৃকা হউন সবার বেলাতেই এক উপলব্ধি । মা দের সাথে বিধাতার স্বর্গের বা ভবিতব্যের এইযে এক নিঃশর্ত অলঙ্ঘনীয় একটা যোগাযোগ , এই যোগাযোগটি নিজেই  তো একটি অতিপ্রাকৃত বিষয় ।

যা হরহামেশা আমাদের আটপৌরে জীবনে ঘটে চলেছে । 


আচ্ছা আমি একটু যূথীর সাথে টেলিপ্যাথি করে দেখবো? আমার কি চোখ বন্ধ করতে হবে? নাকি এমনি এমনি মনে মনে ওর  কথা  ভাবলেই হবে কিছুক্ষণ? ভাবলে কি ভাববো? প্রশ্ন করবো? নাকি ওকে এমনি কিছু বলবো?

- "যূথী, এই যূথী, তুই শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা? কেমন আছিস? কি করছিস ঠিক এ মুহূর্তে? তোর  কথা খুব মনে পড়ছে রে । অনেকদিন কথা হয়না তোর  সাথে। রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে তোর বিখ্যাত ডায়ালগ ও মনে পড়ল একটু আগে, জানিস তো? "(ব্যস আমার মন-জানাজানি বার্তা প্রেরণ করা শেষ।)

দেখি আদতে কিছু হয় কিনা । বহুবার তো কাকতালীয়  ভাবে এর ওর সাথে  টেলিপ্যাথি হয়েছে । দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছি সেই সাথে পেয়েছি আনন্দ-ও । এবার দেখি ইচ্ছে করে টেলিপ্যাথি করা যায় কিনা।

বলা হয় মহাবিশ্ব গোটাটাই বাস করে আমাদের ভিতর । যে কোন উত্তর, যে কোন মতামত নিতে সন্দিহান হলে শান্ত হয়ে বসে মনের জগতটাকে এক মনে শোনার জন্য কান পাতলেই বুদ্ধি, উত্তর, মতামত আমরা যে-যা-চাই  সব মনের গহীন  থেকে উঠে আসে ।

অনেকটা পুকুরের জলের উপরাংশে ঝাপাঝাপি করে, ঢিল ছুঁড়ে যে অস্থিরতা তৈরি  হয় জলের ত্বরণের। একটার পর  একটা  অনুরণন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়ে একে ওপরকে । পরপর  এক একটা  বৃত্তাকার ত্বরণ একটা নিজস্ব গতিতে, একটা পরিমেয়  দূরত্বে আছড়ে আছড়ে গিয়ে পড়ে পুকুরের দেয়ালে । প্রথমে গতি থাকে দ্রুত, অস্থির, যেন এক্ষুনি  পরপর পরপর ঢেউ গুলিকে ধাক্কা না দিলে তাঁর কিছুতেই হচ্ছেনা  ।

তারপর ধীরে ধীরে গতি ধীর হয়ে আসে ত্বরণের । ধীরে জলের পৃষ্ঠতল কেমন শান্ত, স্থির হয়ে বসে পড়ে। ঠিক তখন জলের ওপর থেকে তাকিয়ে পুকুরের গভীরতা টুকু  টের পাওয়া যায়। যেন পাতালের রহস্য নিজ থেকে উঠে এসে ধরা দেয় মানঃস্পটে । জলের তলদেশের  শৈবাল, জলজ উদ্ভিদেরা, প্ল্যাঙ্কটন এমন কি পাতাল পুরীর  নির্মোঘ তমসাও এসে নিজ অস্তিত্বের জানান দেয় শান্ত পুকুরের জলপৃষ্ঠে।

আমাদের মনটাও ঠিক তাই ।  আমরা মাঝেমাঝেই একে শান্ত করে কান পাততে পারি চাইলে। বোঝার জন্য। নিজের মনের অতলস্পর্শি নিরালোকের সাথে পরিচিতি পাবার জন্য । বহির্বিশ্বের কত অজানা তথ্য জানবার কতইনা নিস্পলক আগ্রহ আমাদের। অথচ নিজের মনটাকেই অমন শান্ত ধীর স্থির হয়ে বসে দেখি আমরা ক'জনা?