মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩

ঐকতান


বনস্হলের পাশ ঘেঁষা আবহটা 

গায়ে মেখে

আমার বুকের ভেতর কাঁদায় দাঁড়ানো 

দুধ-নরম গাম্ভীর্যের বক,

কি ভেবে হঠাৎ ;

অপাঙ্গে সব বুঝে নিয়ে

প্রকৃতির সাদৃশ্যে মন গুঁজে -

আবারও এক পায়ে 

ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো 




সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২

অন্তর্মুখীর বিষয়াদি

 জল ধরিতে চাও কন্যা

জল ভরিতে যাও

জলের মধ্যে ছলের বাড়ী

বারেক ফিরে চাও 


ছল করোনা ঘর করোনা 

উত্তরী বায় মাগে

বিজন দুপুর

ঘুঘুর পাকুড়

বিরান পড়ে থাকে 


জল ধরবা গো কন্যা

ওঠো এই নায়ে

নাও পার হইবা 

গাঁও ভুলাইবা

পলাশ বাঁকের বায়ে


পলাশ দিঘী পলাশ দিঘী

ফুল ফোটোলো সই

পরান আমার শৈশবেতে

ঘুড়ির নাগাল কই?


নাগাল?

সে তো দূর বাহাৎ

ছায়ার কাহিনী  

খর রৌদ্রের হুহু ধূলায়

দরদ মাখানি 



ঈশান রবি

ধানের মাঠে

চড়াইভাতির চূলা

এক আসমান ম্যাঘ আইছে

মন ভাসাইবো ভ্যালা ।


ভ্যালা ভাসছে 

ভ্যালা ঠেকছে

হায়রে কচুরি

অসীম বিলাস

ব্যোমের তলে

আবেগ বাহারি ।


কেউ দেখেনি

কেউই জানেনি

হঠাৎ কোথায় মেয়ে ?

নাকছাবি আর শাড়ীর দেহে

ভাসান গেল যে !

বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

মাঝে মাঝে খুব একটা চিঠি পেতে ইচ্ছে করে

মাঝে মাঝে খুব একটা চিঠি পেতে ইচ্ছে করে।

চিঠিটা কার কাছ থেকে আসছে জরুরী না

এর প্রেরক যেন নিখোঁজই থাকে।

কিংবা ধরোখোঁজ-জানলেও-বলতে-মানা।


তারপর শোননা কি থাকবে ওতে লেখা।

একটা গরুর গাড়ি অন্ধকার করে আসা আকাশের নীচে 

মাথা ছুঁই ছুঁই মেঘমাথায় করে 

নদীর ধার বরাবর 

আধা ন্যাড়া হলদেটে মাঠের পাশে 

ক্যাঁচক্যাঁচ করে হাঁটছে।


লেখা থাকবে পিঁপড়ের ঢিবি।

পৈতে পরা বড় মামার তুলসী গাছের প্রীতি।

নিষ্পাপ শিশু থাকবে।

ভাত-ঘুম দুপুরবেলায় হঠাৎ

যেমন চুড়িওয়ালির অযাচিত হাঁকডাক

ফটক জুড়ে।

তার ঝাঁপিতে যেমন থাকে হরেক রকম রেশমী চুড়ি

রিনিঝিনি 

পানসে বেগুনহলদে সবুজ,

আকাশী রঙা ওই এক ডজন।

কালোর ওপর রূপোলী ছিটে।

খয়ের মাখা কাঁচের মাঝে মিলে মিশে

সোনালী বুটি?

ক্যাটকেটে কমলার পাশে গুরুগম্ভীর মাস্টার হয়ে

রেগে থাকা বাদামী ডজন।


এরকমই টুকিটাকি গোটা একটা

ছোটবেলার আদ্যপান্ত স্মৃতির ঝাঁপি

লেখা থাকবে।


ঘি রঙের লেফাফাতে

পুরনো দিনের গন্ধ থাকবে।

যত খুশী লেফাফা পেতে

ঠিক ততই মন-কেমন-করা

উদাস হবো , গন্ধ নিতে।


চোখের সামনে ভেসে ওঠবে

মা বুকের ওম পাওয়া মুরগীর ছানার  মতন

এক একটা আদুরে স্মৃতি।


ডাকপিয়নের সাইকেলচৈত্রের ভ্যাপসা গরম,

ধূলোর সাথে যত্নে মাখা এক লেফাফা

এক অবেলার রোমন্হন।

কাঁচের চুড়ি 

রিনিঝিনি

গরুর গাড়ি

হলদেটে মাঠ

উদাসী পাখি

ব্যস্ত নদী

মাঝির হাঁক

বাড়ীরকাজ হোম-টিউটর লোডশেডিং

মশার কামড়

জোনাক ডাঙর

খড়ের পু্ঁজি

মেঘ থেকে রোদ

হাবিজাবি 

অক্ষরের ভাঁজে ভাঁজে

না লেখা সব

সকল গলির  অলিগলি।


এমন চিঠি।

প্রেরকঅজানা

প্রাপকঅজরুরি

স্মৃতিভুরি ভুরি

বিরামহীন

রিনিঝিনি

রিনিঝিনি।



বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১

পরিপ্রেক্ষিত

 তোমরা দ্যাখো তার 

বাসন্তী পর্দায় 

ছাঁকা ছিদ্রখানি । 

সে ছেঁড়া । 


ছিদ্র। ছাঁকনি। 

পর্দা। 

তার বসন্তে। 

দ্যাখনটা দ্যাখো 

তোমরা। 


ছোট্ট ছিদ্র 

ছাঁকনি হয়ে 

পর্দায় দোলে।।  

সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

জড় আর বিমূর্তের সহাবস্হান

 সে আমাকে বললো

জীবনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার কথা

অপ্রাসঙ্গিক আমি দেখতে পেলাম, 

আজানু কাশবনে দাঁড়িয়ে থেকে

নিজের হারিয়ে যাওয়া।



ছাদ ভেসে যায় 

আকাশের আহ্বানে ! 

কই এমন করে ডাক

আমাকে কোন মানুষ

তো দিলোনা কোনখানে !


ছাদ আর আকাশের

নিরন্তর প্রেম

কবে কে করেছে

কার সাথে!

রমঝম বর্ষা

চোখ-অন্ধ-করা রোদ

তারে ঝোলানো কাপড়ের 

উথাল পাথাল হুঁটোপাটি ।  

ফাঁকে ফাঁকে হাওয়ার

ছুট ।


একান্তে, হৃদয় খুলে দাঁড়িয়ে থাকা ছাদ ।  

এক বুকে তাকে 

আগলে ধরা আকাশ । 




বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

স্পর্শ


... এরপর ঘিরে রইলো 

কুয়াশা তোমায়।

খুব অকস্মাৎ 

অধরে অধর ছুঁলো !

ঝুঁকে এসে আহরণ করলো

 অস্তিত্ব।

বাতাসের নরম পাখায়

ভেসে থাকলো অস্হির-নিশ্চিত,

জলকণা।


ওষ্ঠে পৃষ্ঠে অনুরণন

পিন-পতন বাতাবরণ …

আধো ধোঁয়া 

আধো অন্ধকার



চকিতো এ স্পর্শ

ঘোর মেঘতান

মুহূর্ত ডুবে রইলো

ভেজা অভ্রের ঘ্রাণ ॥


শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

ব্যক্তিগত অভিধান

 ইন্দ্রিয় - বোধ তৈরির অনুরণন-মাধ্যম বা মাপকাঠি । 

আমাদের পারিপার্শ্বিকতাকে, আমাদের পরিবেশ কে বা চারপাশ কে উপলব্ধি করার জন্য যে  মাধ্যম বা মাধ্যম গুলো দ্বারা অনুরণন অনুভব করে করে  আমাদের চৈতন্য পরিপক্ব হয়, সমঝদার হয়  । যার দ্বারা  আমরা নিজের সম্পর্কে এবং যে জায়গায় অবস্থান করছি তার সম্পর্কে একটি নিজস্ব ধারণা গঠন করতে সক্ষম হই। যে কোনকিছু সম্বন্ধে আমরা একটি ধারণা তৈরি করতে পারি মনে মনে। মোদ্দা কথা যে মাধ্যম দ্বারা বিভিন্ন অনুরণন অনুধাবন করার মধ্য দিয়ে আমাদের মনের ভেতর নানারকম বোধের সৃষ্টি হয়, তা-ই হল ইন্দ্রিয়। 

উদাহরণঃ দৃষ্টি - চোখ থাকলেই দেখা যায় কি? 

 দৃষ্টি হল নিভৃতে,

বুকের ভেতর জেগে থাকা 

অসীম বোধের তৃপ্তিতে।  

হোক তা কর্মেন্দ্রিয়, জ্ঞ্যানেন্দ্রিয় কিংবা অন্তরিন্দ্রিয়। এক একটি  ইন্দ্রিয় হল  এক একটি অনুরণন পরিমাপ করার ভিন্নভিন্ন  মাপকাঠি। যে কারণে প্রকৃতি আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের উপস্থিতি এবং তাদের ব্যাবহার প্রদান করেছে ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি ইন্দ্রিয় একটি নির্দিষ্ট অনুরণন পরিমাপ করবার জন্যই তৈরি। যেমন কান দিয়ে আমরা কেবল শব্দের অনুরণন উপলব্ধি করতে পারি। জিভ দিয়ে শুধু স্বাদের অনুরণন। এর উল্টোটি নয়। 

আরও মজার ব্যাপার হল প্রাণী বিশেষে এ নিয়ম আবার আলাদা। যেমন- সাপ; এটি এক প্রকার সরীসৃপ। যার শ্রবণ ক্ষমতা মানুষের মত নয়। এর শারীরিক গঠনে কোন কর্ণ বা কানের উপস্থিতি দেখা যায়না । অথচ সাপ  স্বাদ এবং শ্রবণ উভয় অভিজ্ঞতা অনুভব করে জিভ দিয়ে। সে বার বার জিভ বের করে তার  পারিপার্শ্বিক বস্তু জগতের শব্দ, শব্দের গতি, বস্তুর স্থিরগতি, চলমান গতি, বেগ, দূরত্ব, অবস্হান এমনকি তাপমাত্রা পরিমাপ করে একটা আনুমানিক ধারণা পায় । 

( প্রাসঙ্গিকঃ শাস্ত্রমতে ইন্দ্রিয়ের প্রকারভেদ তিন রকম  

দেহেন্দ্রিয় / জ্ঞ্যানেন্দ্রিয় - পাঁচটি। 

চক্ষু  (দৃষ্টির মাপকাঠি ) , কর্ণ (শ্রবণের মাপকাঠি ) , নাসিকা (আঘ্রাণের  মাপকাঠি ) , জিভ (আস্বাদের  মাপকাঠি ) , ত্বক (স্পর্শের মাপকাঠি)।


কর্মেন্দ্রিয় পাঁচটি । 

বাক- কথা বলার ক্ষমতা। 

পাণি- হাত। যে কোন কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষমতা। 

পদে -চলা বা  শারীরিকভাবে নিজেকে অন্যত্র বহন করে নিয়ে যাবার ক্ষমতা। 

পায়ু- দেহের ঊচ্ছিষ্ট ত্যাগ করার ক্ষমতা, যা বিপাক ক্রিয়া সঞ্চালনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

উস্থ - যোনি বা যৌন ক্ষমতা, কিংবা যৌনাবেগ  বা যৌনতার ইচ্ছা । 


অন্তরিন্দ্রিয় চারটি । 

মন, বুদ্ধি, অহংকার ও চিত্ত।  ) 

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সবচাইতে মজার এবং চিরন্তন ইন্দ্রিয়- যা দ্বারা  আসলে ভূত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ঘটে গেছে, ঘটে চলেছে এবং ঘটতে যাচ্ছে এর আভাস পাওয়া যায়, তা হচ্ছে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। এর সাথে যেন স্বয়ং ইন্দ্রের সরাসরি যোগাযোগ। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সকল সত্য ও তত্ত্ব এই ইন্দ্রিয়ের মাপকাঠিতে সর্বদা ধরা দেয়।। যা শাস্ত্রের অন্তরিন্দ্রিয় এর কাঠামোয় পড়েও পড়লো না।

এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়তে মগজের- বুদ্ধি  অথবা/ এবং অহংবোধের কোন সুযোগ নেই। সরাসরি ইথারের সাথে তত্ত্ব ও তথ্য আদান প্রদানের একটি সূক্ষ্ম যোগাযোগ মাধ্যম। 


 



হোম- আপন, নিজস্ব বলয়। ইংরেজিতে "হোম" বলতে যা বোঝায়,  তা ঠিক শাব্দিক অর্থে বাড়ি বোঝালেও  আসলে তো ঠিক বাড়ি বা সবসময় আবাসস্থলও  বোঝায় না। এ যেন এক সার্বিক আশ্রয়ের প্রতিরূপ। কিন্তু যিনি আশ্রিত তিনি অসহায় বলে এখানে আশ্রিত তা নয়। এ একেবারে সুখ নিয়ে আপন বলয়ে থাকার নাম। এ হতে পারে আপন কাজ বা শখ। কিংবা দৈনন্দিন অভ্যস্ততা। হোক তা কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে, পার্কে, হাটে, মাঠে ঘাটে, এখানে জায়গা, বা কাজটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কখনো কখনো সময়কেও  হোম বলা যায়। কোন কোন মানুষ শুধু একটা সময়কে  ধরে রেখে কাটিয়ে দিতে পারে এক জীবন। কিংবা একটা  যুগ একটা হোম। যে কারণে শোনা যায় অমুক দশক, তমুক দশক নিয়ে লোকে নস্টালজিয়ায় ভোগে।  একটি নির্দিষ্ট কাজ করলে, নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করলে, কিংবা কোন নির্দিষ্ট মানুষের সঙ্গ যে আপন বলয়ের, পরিচিত, চিরচেনা চিরাশ্রিত এক অনুভূতির উদ্বেগ ঘটায়, সেই অনুভূতির নাম হোম।

 

উদাহরণ এক,  

আমি রোজ একবার করে ভালবেসে আমার বাড়ির টবের গাছগুলোকে পানি দিয়। গাছগুলোর  সঙ্গে গল্প করি। এক একটা পাতায় আঙ্গুল ছোঁয়াই। তাদের একটু একটু বেড়ে উঠতে দেখি। নীরবে ভালবাসার  উপস্থিতি টের পাই। গাছেদের সাথে কাটানো এই সময়, ওদের সঙ্গ আমার জন্য হোম। 


উদাহরণ দুই,

আমি লোকের বাড়িতে কাজ করি। দিনের বেলা ঘরদ্বোর সামলানো। রাতে বাড়ির ফটকের পাশে খোলা আকাশের নিচে মশারি পেতে তারাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বিশ্রাম নেয়া । ফেলে আসা আমার গ্রাম, শৈশব- কৈশোরের বন্ধুদের সঙ্গ, ঘুড়ি ওড়ানো, মার্বেল, গাঁয়ের আড়ং, নানাভাইয়ের কিনে দেয়া প্রথম একটা ছোট্ট লুঙ্গি আর আমার বোন শালুর তিন বছর বয়সী হাতে প্রথম কাঁচের চুড়ি... রিনরিন রিনঝিন, শালুর কণ্ঠে সারাদিন, "দাদা, লগে দামু।"  "দাদা, কান্ধে তরমু।"  "দাদা এই"... "দাদা ঐ"... রিনরিন রিনঝিনের সাথে এখন শুনতে পাই- এ বাড়ির ফটকের বাইরের রাস্তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া হুঁশহাশ চার চাকার গাড়ি, কখনও  ট্রাক, কখনও বাস, রিক্সার ক্রিং ক্রিং, অটোর ভট্ ভট্। সেই সাথে এ বাড়ির আমার মতই  পোষা  কিন্তু আমার চাইতে বেজায় দামী সদস্য ওদের পোষ্য কুকুর, কমেটের সঙ্গ। 

সে প্রায়ই শখ করে এসে আমার তারার-নিচে বিছানার পাশে শুয়ে থাকে। কিচ্ছুটি না বলে। কোন আওয়াজ না করে। 

যেন জানিয়ে দেয়-

"এই যে আমি আছি। তুমি তো একা নও। এখন দেখি একটু চুপটি করে ঘুমোও।"   

গ্রামের ইশকুলের ফাইভ পাশ আমি ভূগোল বইয়ের নক্ষত্রের সংজ্ঞা মনে করতে করতে মশারির ছাঁকনি ভেদ করে তারা গুনি। তারা দূরে না কাছে বোঝার চেষ্টা করি। রাত যত গভীর হয় গরমের রাতে, তত মায়ের হাতের ধান থেকে খই ফোটার মত এক একটা নতুন নতুন তারা ফুটতে দেখি। যেন আমি ঠিক শব্দ শুনতে পাই ... পট্ পট্ পট্ ... "দাদা এই, দাদা ঐ"... কচি হাতের লাল কাঁচ ... রিনরিন রিনঝিন ... ক্রিং ক্রিং ... ভট্ ভট্ ... কমেটের নিশ্চিন্ত নিঃশ্বাস... আমি ডুবে যাই ঘুমে। মনের অতলে। আপন বলয়ে। 

ঘুড়ি, মাঠ, ছোটবেলার দুরন্তপনা, গাঁয়ের আড়ং, মায়ের মুখ, নানা ভাইয়ের টুপি, আমার পাশে শোয়া কমেট, সারাদিনের হাড়ভাঙা শরীর সব কেমন তারায় ভরে ওঠে। মাঠ না এই ফটকের আশ্রয়? কমেটের সঙ্গ না বোনের আবদারি গলা? ... মা'র মুখ না এক আকাশ তারা?  সব মিলে মিশে তন্দ্রায় আমি ঝাঁকুনি খাই। আবার তলাই। আবার যাই। আবার উঠি। আবার ভাসি। ভাসতে থাকি। যেতেই থাকি...পেতেই থাকি আমার নিজস্ব আশ্রয় । 


উদাহরণ তিন,

আমি একটা ভ্রূণ। ( বলতো আমি কোন প্রাণের ভ্রূণ?এটা তোমার জন্য একটা ধাঁধা)  এই যেখানটাতে আমি আছি এর চাইতে নিরাপদ আশ্রয় আর কারো নেই। তুমি কোথাও খুঁজেই পাবেনা!  আমি যে ডিম্বাশয়ে আছি, প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মী আমার আশেপাশে উড়ে বেড়ায়। আমার এই ষষ্ঠ ভূজের চৌকাঠ আর মধুর গন্ধে আমি নিশ্চিন্তে কাটাই জীবন।। 





হৃদয়- যে স্থানে চেতনা, অস্তিত্বের উপস্থিতি উপলব্ধ হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার সারাদিন পর রাতে ঘুমুতে যাবার আগ অব্দি যাবতীয় যত আবেগ, অনুভূতি এসে জানিয়ে দেয় যে এই আমি। সূক্ষ্ম আবেগ, অনুভূতি থেকে স্থূলতা, ক্লিষ্টতা, ব্যথার কষ্ট সুখের আরাম এসব যেখানে উৎপত্তি হয় ও জমে থাকে, বলে দেয় এই আমি। এর নাম- বেঁচে-আছি। এই আমি-অস্তিত্বের চারণভূমি হল, হৃদয়।   



মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

এমন একটা নেমন্তন্ন

 তুমি এসো আমার বাড়ি

খেতে দেবো এক খিলি পান

বসতে দেবো পিঁড়ি

মাথার ওপর ছন্

আর কাদায়লেপা মাটি

এইতো আমার সদোর পরিপাটি।।


বৃষ্টি এলে জানলা দিয়ে?

মাটি-মাটি গন্ধ মেলে

বাহির করে মুখটি তুমি

পেতো হৃদয় ঢেলে।


কাছেই কোথাও বেশ-দূর-নয়

এমন দূরে দিঘী আছে

বারোয়ারি।।

আমকাঁঠালের ভিড় ঠেলে

পাতাগুলোয় মাখামাখি

মধুর মাছির দাপাদাপি

গন্ধে বিভোর আঙ্গিনাতে

মিঠে কুয়োর স্বচ্ছ পানি।



আর কিছু নয় 

চাটাই পেতে গাভীর চোখে

চোখ রেখে

ভাবছো তুমি অলস জীবন

অম্নি তোমার কোলের উপর

ছাগলছানার হুমড়ি খাওয়া

আদর সোহাগ ভাবছো পাছে?

ও এদের দস্যিপনা।



বেশ কয়টা লতানে গাছ

সব্জিফুলশাকের ঢেঁড়ে

বেড়ে ওঠা গুচ্ছ সুখ পুচ্ছ আমেজ।

চোখের কোণে ঠোঁটের ভাঁজে সে

হাসি হয়ে কচি সবুজ।



গেল বছর উমা এলো?

চালের গুঁড়ির আল্পনাতে

ঘর বেঁধেছি।

দুধ সাদা কল্কি গুলো 

শান্তি চোখে উঠোন জুড়ে।

না গো না শিল্পী নই

এই একটু উমার জন্য 

আয়েশ করে পিঠে পুলি।

নারকোলের চিড়েভাজা

কয় রকমের মাছের ভাজা।

খেলোও সেবার ঠাকুরেরা

আসনের নয়কো শুধু

বাড়ি বয়ে চলতি আসা

অতিথিদের পদার্পণে

এদিক সেদিক

হুলূস্হুলে।



এ ঘর ওঘর পায়ে পায়ে

আলতা সেজে সিঁদুর মেখে

ধূপ ধুনোর কুয়াশা তলা

ঢাকের বাদ্যে কানেতালা

হাসি আবীর প্রসাদ

প্রদীপ আতশ ফুলঝুরিতে

আশীর্বাদে স্নেহ মার্জনায়

পেটুক ছেলের বাড়তি লাড্ডু

পুজোর দিনে ঘাটেহারা সাপলুডু


গোধূলির অস্তরাগে

মন্ডপের খুশীর ভীড়ে

দূর্গা নামের একই মেয়ের

শত শত রূপ


কত অঙ্গে রঙ ঢঙে

রঙিন বেলুন ফানুস

প্যাঁড়া সন্দেশ মিষ্টি দইয়ে

ভোগের খাবার বাড়তে যেতে,

খাইয়ে দিতে। 

দশ হাতে তার আগলে রাখা।


সবই হল

এলো যেমন ত্রস্ত পায়ে

চলেও গেল।

কিন্তু এই নিরোন উঠোন

আল্পনাতে ছোট্ট গৃহের

বুকের 'পরে 

খেলে বেড়ায়

যে বাতাস খানি

দরজার পর্দা ওড়ে

আঙিনায় কাপড় নাচে

সেই সাথে পেখম মেলে

পরম নামের মোরগখানা।


এসো তুমি যেমনি পারো

আমার ঘরের দাওয়ায় বসো

একটুখানি জিরুতে এসো

ঠিক একফালি এত টুকুন

ঘরকন্নায় 

এক আকাশ জায়গা মেলে।

এসো তুমি।

এলে পরে কুয়োর অমন ঠান্ডা জলে

মন ভিজিও।

পুঁইয়ের পাতার ছায়ায় ভরা

উনুনপারেধোঁয়াওঠা 

এক বাটি দুধ

ঢাকা রইলো।


এসে পড়ো ইচ্ছে হলেই

গ্রামের পথের পাকুড়

গাছের বাঁ দিকে যে

কাঁচা রাস্তা

সর্ষে ক্ষেতের আল বরাবর?



ওই যে দূরে ছনের বাড়ী

তার মাটির দেয়াল

ঘর দুয়োর।।

আল্পনাতে

লাউয়ের বেড়ার

জংলা মতন।।

কচি সবুজ লতানে ঝাড়।

চিনলে তো খুব?

আসছো তবে?


তারার উঠোন মাথায় নিয়ে

হ্যাঁজাক জ্বেলে পথ চাইবো

বলছো তুমি?

সেবার মেলায় কেনা

গিরিবাজটা বাবা হবে

সাদা সাদা ছোট্ট কিছু

ডিম জমেছে।

দিনরাত সে কি তার পাহারাদারী!


এলে পরে হলদেটে লাল 

আগুন জ্বেলে

গভীর নীল রাতের আকাশ

হাজার তারায়ও

কতটা একা,

দেখতে পাবে।


আমাদের উঠোন জুড়ে

চাদর গায়ে 

হিম আকাশের বরণখানি

এক আসমানে হাজার বুটি


আসছো তবে?

এলেই তুমি

অতিথি মোর

পরম যত্নে আপন হবে।।