সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

সমুদ্র ও মানবী

( ১ )
সমুদ্র: তোমার নাম কি?
একা: একা ।
সমুদ্র: ওটা তো তোমার বৈশিষ্ট্য, নাম কি?
একা: একা।
সমুদ্র: প্রতিদিন এই বিকেলে, আমার পাশে দাঁড়িয়ে
কি দেখো তুমি?
একা: তোমাকে ।
সমুদ্র: আর?
একা: তোমার বিশালত্বকে, টিপের মত গোল
সূর্যটাকে—আর . . .
সমুদ্র: আর ?
একা: আর আকাশটাকে ।
( ২ )
সমুদ্র: কেমন আছো?
একা: এইতো ।
সমুদ্র: এ কয়দিন এলে না যে ?
একা: আমার কথা তোমার মনে পড়েছে ?
সমুদ্র: না তো, জোয়ার নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম, তোমার কথা ভাববো কখন?
একা: ও আচ্ছা, আমি ভাবলাম . . .
সমুদ্র: কি ভাবলে?
একা: কিছু না।
সমুদ্র: বলো, কি ভাবলে?
একা: কিচ্ছু না তো, আজ আসি।


( ৩ )
সমুদ্র: আচ্ছা সারাটাক্ষণ এমন মনমরা হয়ে থাকো কেন ?
একা: কই নাতো !
সমুদ্র: হুম, তা নাহলে এত চুপ করে থাকো কেন ?
একা: কোথায় চুপচাপ, কথা বলছি তো।
সমুদ্র: আচ্ছা, তুমি কি আমার চেয়েও একা ?
একা: তুমি আবার একা হলে কবে?
তোমার তো আকাশ আছে। সূর্য আছে।
জোয়ারের ব্যস্ততা আছে।
সমুদ্র: থামো।
একা: কেন ?
সমুদ্র: জানো, ইদানীং কেন যেন কিছু ভাল লাগেনা।
একা: কেন?
সমুদ্র: জানিনা, রাতের বেলা জেগে জেগে আকাশপানে
তাকিয়ে থাকি . . .
একা: কি দেখো ওখানে ?
সমুদ্র: কিছু একটা দেখতে চাই, কিন্তু কিছুই দেখতে পাইনা।


( ৪ )
একা: জানো, কাল একটা অদ্ভূৎ স্বপ্ন দেখলাম ।
সমুদ্র: কি স্বপ্ন ?
একা: দেখলাম তোমার কাছে খুব ছুটে আসতে চাইছি কিন্তু
পারছি না . . . তারপর . . .
সমুদ্র: তারপর ?
একা: তারপর আর কি? আসি ।
সমুদ্র: তোমার কি এমন অর্ধেক কথা না বললেই না ?
একা: ( দূরে গিয়ে হেসে) না ।


( ৫ )
সমুদ্র: শোন, আজ পূর্ণিমা ।
একা: তাই?
সমুদ্র: তুমি এই শুক্লা দ্বাদশীর রাতে আসতে পারবে?
একা: পারবো। আসি তাহলে ।
সমুদ্র: (একটু চেঁচিয়ে) শোন শোন, ১টা নীল শাড়ী পরে এসো ।
একা: কেন?
সমুদ্র: আর একটা নীল টিপ । চুল বেঁধো না।
একা: কেন বলবে তো।
সমুদ্র: আজ মেঘেদের ছুটি । তোমার চুল দিয়ে
যদি ফাঁকটুকু ভরে !
একা: (কৌতূহলী) আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !

( ৬ )
একা: কি অদ্ভূত লাগছে রা-তটা !
আকাশ আজ দারুণ সেজেছে । বাতাসও গায়ে হিম
মেখে এসেছে। ওমা জ্যোৎস্না তো বেলাকে রূপোলি করে সাজিয়েছে !
সমুদ্র: হুম্ , এটাই তো পূর্ণিমা।
একা: সত্যিই চমৎকার । আমাকে নিমন্ত্রণ করেছো
এর জন্য ? খুব ভালো লাগছে ।
সমুদ্র: না তো, আমি তো এ জন্য ডাকিনি?!
একা : তাহলে?
সমুদ্র: জানো এইদিনে আমি সবচেয়ে পাগল হই? আমার ঢেউ দিয়ে তীরের প্রিয়
কোন কিছুকে ইচ্ছেমত ভিজিয়ে দিই ।
একা: ও আচ্ছা ।
সমুদ্র: ( .  .  .)
একা: এ—মা ! আমি একদম ভিজে গেলাম তো !
সমুদ্র: ( . . . )
একা: আমি আসি।
সমুদ্র: এই উৎসবের রাতে আমার ঢেউয়ের জবাব
না দিয়ে যাবে ?
একা:আমার কোন জবাব নেই ।
সমুদ্র: সত্যি-ই নেই ?
একা: না ।
সমুদ্র: ও আচ্ছা, এসো ।
একা:  . . .
সমুদ্র: কি হল? ফিরে এলে যে?
একা: শোন
সমুদ্র: বলো
একা: আমায় এতো দেরি করে ভেজালে কেন ?!

রাজ্য

: জানো, এক রাজপুত্রের সাথে বন্ধুত্ব হল।
- তাই ?
: হুম, এ—কদম শিশুর সারল্য।
কোথা থেকে আটটা নীল পদ্ম এনে
বলল -“রাখো”।
কি আর করা হৃদয়টাকে বিল বানিয়ে
ওর মধ্যে রেখে দিলাম।
- আচ্ছা?
: হ্যাঁ । আর ওকে এত ভালবাসি কেন জানো?
-কেন ?
: ওর কবিতা, ওর গানে কেমন যেন একটা মায়া আছে।
কিন্তু হঠাৎ সর্বনাশ ঘটল কালই ! . . .
- কেন কি হল?
: কাল হঠাৎ সেই শিশু আমায় একলা ঘরে পেয়ে ডাকাতি শুরু করল! আমি বলি- “রাজপুত্র, তুমি তো ডাকাত!”
ও বলে- “উহু, রাজদস্যু। ভয় পেয়োনা রাজকুমারী, যাবার বেলায় ভেট দিয়ে যাব।”
- তা কি ভেট পেলে?
: সারা গায়ে চুমুর কলঙ্করেখা।
- শুনেছি, রাজদস্যুরা একই রাজ্য দু’বার ডাকাতি করেনা।
: মরণ!
- কেন? এখন আবার কি হল?
: আমায় যে ভেটের নেশায় পেয়ে গেল ?!
- ( একটু হেসে। কাছে এসে) ভয় নেই,
রাজপুত্র জানে তুমি-ই এখন তার রাজ্য।