বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

একটি দোলনার আত্মকথন (৩)

~সে এলো ঝনঝনিয়ে
আঁধার করে সব
ধূসর মেখে ঝাঁপসা হল
জোড়া মাঠের বক ।
জল হাওয়ার পাল তুলে
মেঘের মাস্তুলে
কেউ একজন একলা হল
দোলনা দুলে দুলে~

আমার দাবদাহ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষার ইতি টেনে বর্ষা আসে। যে সীমান্তে দৃষ্টি রেখে ক্লান্ত হলো চোখ সে সীমান্তে হঠাৎ দেখি মস্ত কালো যোগ। চারদিক অন্ধকার করা সর্বনাশ নিয়ে, ডাকাতের মত একদল লুটেরা ফেরারী বাতাস মাঠঘাট ভিজিয়ে, আসমান জমিন এক করে আছড়ে এসে পড়ে বুকের ওপর। একের পর এক বিষ্টি বানে কুপোকাত যাবতীয় সব রূক্ষতা। ধূলোবালি শুষ্কতাকে ছুটি দিয়ে সারা গায়ে গোলাপজল আর স্বস্তি দিতে, শ্যামল সুখের স্নিগ্ধ প্রলেপ মেখে দেয় বর্ষা । মুখে বিষ অন্তরে মধু ~ মুখে বৃষ্টিবান অন্তরে স্নিগ্ধতার গান। বর্ষার এ বৈশিষ্ট্য বুঝতে অনুধাবন করতে আমার অনেকটা সময় লেগেই যায় । কচুরীপানার ডোবা, নিচু মাঠ, মাঠের উপর থেকে থেকে যে গর্ত  সব টইটুম্বুর জলে।
হৈ হৈ রৈ রৈ আড়ম্বরতা যখন একটু থিতিয়ে আসে। তখন সারাটাদিন গুঁড়ু গুঁড়ু মেঘ পাল্লা দিয়ে বাজে ব্যাঙেদের অর্কেস্ট্রার সাথে।
আমি ।একটা দোলনা। সব-গা-ভেজানো, সব-গা-ধোয়ানো তণুমন নিয়ে প্রকৃতির এই স্নানোৎসব উপভোগ করি পরম মমতায়। জেগে উঠি আড়মোড়া দিয়ে সতেজ স্নিগ্ধতায়। কাঠ, দড়ি আর কিছু ছোট্ট লোহার পেরেক দিয়ে আমার বসন। ঠিক যেমন মেঘ বৃষ্টি জলে হয় বর্ষার আসন।

বর্ষা আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু। গায়ের ধূলোকালি ধুয়ে সর্বাঙ্গ ডুবিয়ে আমায় যেমন স্নান করায়, তেমনি শত ডামাডোলের ভীড়ের ঠিক নীচে, আমায় উদাস হতে শেখায়। বর্ষায় আমি একলা চলি। একলা দুলি। একলা মনে হাঁটি। এত যে জল চারিপাশে, তবু মস্ত ধূসর আকাশপানে, চোখ ভরে আমি নিজের জলে কাঁদি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন