তুমি এসো আমার বাড়ি
খেতে দেবো এক খিলি পান
বসতে দেবো পিঁড়ি
মাথার ওপর ছন্
আর কাদায়লেপা মাটি
এইতো আমার সদোর পরিপাটি।।
বৃষ্টি এলে জানলা দিয়ে?
মাটি-মাটি গন্ধ মেলে
বাহির করে মুখটি তুমি
পেতো হৃদয় ঢেলে।
কাছেই কোথাও বেশ-দূর-নয়
এমন দূরে দিঘী আছে
বারোয়ারি।।
আমকাঁঠালের ভিড় ঠেলে
পাতাগুলোয় মাখামাখি
মধুর মাছির দাপাদাপি
গন্ধে বিভোর আঙ্গিনাতে
মিঠে কুয়োর স্বচ্ছ পানি।
আর কিছু নয়
চাটাই পেতে গাভীর চোখে
চোখ রেখে
ভাবছো তুমি অলস জীবন
অম্নি তোমার কোলের উপর
ছাগলছানার হুমড়ি খাওয়া
আদর সোহাগ ভাবছো পাছে?
ও এদের দস্যিপনা।
বেশ কয়টা লতানে গাছ
সব্জি, ফুল, শাকের ঢেঁড়ে
বেড়ে ওঠা গুচ্ছ সুখ পুচ্ছ আমেজ।
চোখের কোণে ঠোঁটের ভাঁজে সে
হাসি হয়ে কচি সবুজ।
গেল বছর উমা এলো?
চালের গুঁড়ির আল্পনাতে
ঘর বেঁধেছি।
দুধ সাদা কল্কি গুলো
শান্তি চোখে উঠোন জুড়ে।
না গো না শিল্পী নই
এই একটু উমার জন্য
আয়েশ করে পিঠে পুলি।
নারকোলের চিড়েভাজা
কয় রকমের মাছের ভাজা।
খেলোও সেবার ঠাকুরেরা
আসনের নয়কো শুধু
বাড়ি বয়ে চলতি আসা
অতিথিদের পদার্পণে
এদিক সেদিক
হুলূস্হুলে।
এ ঘর ওঘর পায়ে পায়ে
আলতা সেজে সিঁদুর মেখে
ধূপ ধুনোর কুয়াশা তলা
ঢাকের বাদ্যে কানেতালা
হাসি আবীর প্রসাদ
প্রদীপ আতশ ফুলঝুরিতে
আশীর্বাদে স্নেহ মার্জনায়
পেটুক ছেলের বাড়তি লাড্ডু
পুজোর দিনে ঘাটেহারা সাপলুডু
গোধূলির অস্তরাগে
মন্ডপের খুশীর ভীড়ে
দূর্গা নামের একই মেয়ের
শত শত রূপ
কত অঙ্গে রঙ ঢঙে
রঙিন বেলুন ফানুস
প্যাঁড়া সন্দেশ মিষ্টি দইয়ে
ভোগের খাবার বাড়তে যেতে,
খাইয়ে দিতে।
দশ হাতে তার আগলে রাখা।
সবই হল
এলো যেমন ত্রস্ত পায়ে
চলেও গেল।
কিন্তু এই নিরোন উঠোন
আল্পনাতে ছোট্ট গৃহের
বুকের 'পরে
খেলে বেড়ায়
যে বাতাস খানি
দরজার পর্দা ওড়ে
আঙিনায় কাপড় নাচে
সেই সাথে পেখম মেলে
পরম নামের মোরগখানা।
এসো তুমি যেমনি পারো
আমার ঘরের দাওয়ায় বসো
একটুখানি জিরুতে এসো
ঠিক একফালি এত টুকুন
ঘরকন্নায়
এক আকাশ জায়গা মেলে।
এসো তুমি।
এলে পরে কুয়োর অমন ঠান্ডা জলে
মন ভিজিও।
পুঁইয়ের পাতার ছায়ায় ভরা
উনুনপারে, ধোঁয়াওঠা
এক বাটি দুধ
ঢাকা রইলো।
এসে পড়ো ইচ্ছে হলেই
গ্রামের পথের পাকুড়
গাছের বাঁ দিকে যে
কাঁচা রাস্তা
সর্ষে ক্ষেতের আল বরাবর?
ওই যে দূরে ছনের বাড়ী
তার মাটির দেয়াল
ঘর দুয়োর।।
আল্পনাতে
লাউয়ের বেড়ার
জংলা মতন।।
কচি সবুজ লতানে ঝাড়।
চিনলে তো খুব?
আসছো তবে?
তারার উঠোন মাথায় নিয়ে
হ্যাঁজাক জ্বেলে পথ চাইবো
বলছো তুমি?
সেবার মেলায় কেনা
গিরিবাজটা বাবা হবে
সাদা সাদা ছোট্ট কিছু
ডিম জমেছে।
দিনরাত সে কি তার পাহারাদারী!
এলে পরে হলদেটে লাল
আগুন জ্বেলে
গভীর নীল রাতের আকাশ
হাজার তারায়ও
কতটা একা,
দেখতে পাবে।
আমাদের উঠোন জুড়ে
চাদর গায়ে
হিম আকাশের বরণখানি
এক আসমানে হাজার বুটি
আসছো তবে?
এলেই তুমি
অতিথি মোর
পরম যত্নে আপন হবে।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন