রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯
ছ- হ্রস্বউকার, 'কি' এর পরে
কিছু কিছু দিন আসে
রাতের মত নিঝঝুম।
এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে খাটের পাশে ।
মাথার কাছে ।
যেন আমার খুব অসুখ করেছে ।
টেবিলের ওপর রাখা কমলালেবুর নরম অস্তিত্বে
সে তখন 'জীবনানন্দ-বোধ' খোঁজে।
কোন কোন দুপুর সন্ধ্যের মত গোপন।
জানালায় উঁকি দিয়ে আকাশ দেখার মত আপন ।
কিছু কিছু রাত স্বচ্ছ ।
ঠিক কাঁচের মতন ।
বিন্দু বিন্দু জল
গুড়ি গুড়ি স্ট্রীটল্যাম্পের আলোয়
গল্পের ঝুলির মতন।
কিছু কিছু বেলায়
স্মৃতি, বাস্তবতা , স্বপ্ন
সব একরকম ।
ঘোলাটে
গোলাপে
প্রলাপে
তালগোলে
সেঁটে থাকা মন।
কিছু শব্দ বার বার হবার ।
আজীবন বেজে যাবার ।
নীরবতাকে ছাপিয়ে -
কাঁচকলা দেখিয়ে
বিবাগী-উদাস ,
স্থায়ী ।
ভেজা রাস্তা , ভালবেসে
যেমনি বৃষ্টিকে বুকে জড়িয়ে ধরে,
মেঘের বুঝি তখন প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসে ?!
পাহাড় , পবন , ঝিকিমিকি তারা,
সবাইকে ডেকে ডেকে
চোখের ইশারায়-
কালো পিচের সাথে বৃষ্টির গভীর
প্রণয়কে দেখিয়ে বুঝি মেঘ ঠোঁট চেপে হাসে? স্নেহভরে?
পিচ রাস্তা
অরণ্যের শর্বর , এরা
একই রহস্য পান করা বোদ্ধা ।
যে সুরায় থাকে প্রেম ।
থাকে আদিগন্ত অস্তিত্ব
ধীর গভীর গম্ভীর ।
টিনের চালার ধার চুইয়ে
ঝুলে থাকে যে সদ্য শিশির
গোটা পৃথিবীর উল্টো আয়না হয়ে ,
তাকে এসে আলতো আলিঙ্গন
দেয় সূর্য ।
সেই সরলতায় কিছু কিছু
দিন বাঁচতে ইচ্ছে করে ।
কিছু কিছু মুহূর্তে
ছ- এর নিচে হ্রস্ব- উকার হয়ে
'কিছু কিছু' সেজে
ঝুলে থাকতে ইচ্ছে করে
শূন্যে ।
কিছু কিছু ।
খুব বেশি নয় ।
রাতের মত নিঝঝুম।
এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে খাটের পাশে ।
মাথার কাছে ।
যেন আমার খুব অসুখ করেছে ।
টেবিলের ওপর রাখা কমলালেবুর নরম অস্তিত্বে
সে তখন 'জীবনানন্দ-বোধ' খোঁজে।
কোন কোন দুপুর সন্ধ্যের মত গোপন।
জানালায় উঁকি দিয়ে আকাশ দেখার মত আপন ।
কিছু কিছু রাত স্বচ্ছ ।
ঠিক কাঁচের মতন ।
বিন্দু বিন্দু জল
গুড়ি গুড়ি স্ট্রীটল্যাম্পের আলোয়
গল্পের ঝুলির মতন।
কিছু কিছু বেলায়
স্মৃতি, বাস্তবতা , স্বপ্ন
সব একরকম ।
ঘোলাটে
গোলাপে
প্রলাপে
তালগোলে
সেঁটে থাকা মন।
কিছু শব্দ বার বার হবার ।
আজীবন বেজে যাবার ।
নীরবতাকে ছাপিয়ে -
কাঁচকলা দেখিয়ে
বিবাগী-উদাস ,
স্থায়ী ।
ভেজা রাস্তা , ভালবেসে
যেমনি বৃষ্টিকে বুকে জড়িয়ে ধরে,
মেঘের বুঝি তখন প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসে ?!
পাহাড় , পবন , ঝিকিমিকি তারা,
সবাইকে ডেকে ডেকে
চোখের ইশারায়-
কালো পিচের সাথে বৃষ্টির গভীর
প্রণয়কে দেখিয়ে বুঝি মেঘ ঠোঁট চেপে হাসে? স্নেহভরে?
পিচ রাস্তা
অরণ্যের শর্বর , এরা
একই রহস্য পান করা বোদ্ধা ।
যে সুরায় থাকে প্রেম ।
থাকে আদিগন্ত অস্তিত্ব
ধীর গভীর গম্ভীর ।
টিনের চালার ধার চুইয়ে
ঝুলে থাকে যে সদ্য শিশির
গোটা পৃথিবীর উল্টো আয়না হয়ে ,
তাকে এসে আলতো আলিঙ্গন
দেয় সূর্য ।
সেই সরলতায় কিছু কিছু
দিন বাঁচতে ইচ্ছে করে ।
কিছু কিছু মুহূর্তে
ছ- এর নিচে হ্রস্ব- উকার হয়ে
'কিছু কিছু' সেজে
ঝুলে থাকতে ইচ্ছে করে
শূন্যে ।
কিছু কিছু ।
খুব বেশি নয় ।
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯
চিঠি। কিন্তু কাকে ? তোমাকে না নিজেকেই?
যে তোমাকে নিয়ে আমি উড়ে বেড়াতাম
আকাশের নীলে বাতাসের ঢেউ হয়ে ,
যে আমরা পৃথিবীর ভৌগোলিক মানচিত্রে
হেঁটে হেঁটে সবুজ পাহাড় , সোনালী সূর্য
দিগন্তের ঘন নীল ছুঁয়ে কল্পনায় ছবি আঁকতাম।
যখন মেলা হবে, শিশু মনে খিল খিল করে
নতুন ওঠা রেশমি চুড়ি , ঝাল ফুচকা,
মানুষের কোলাহল ,
গ্যাস এর আগুন ,
হাওয়াই মিঠাই ,
ষ্টল গুলোর বাহারি নামে
হারিয়ে যেতে যেতে
গল্প করতাম নিজেদের ছোটবেলার।
কখনো বলিনি
কিন্তু আমি মনে মনে আফসোস কুড়োতাম
সেই তোমার মা-হীন ছোট বেলায় কেন আমার
তোমার সঙ্গে দেখা হলোনা।
আমি ঠিক তোমার বন্ধু হতাম।
আমার হাবিজাবি কালেকশন এ ভরা
ছোট্ট লেদারের বাক্সটা আমি
ঠিক তোমায় খুলতে দিতেম।
তুমি যখন অমন সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ার
গল্পটি বলছিলে,
যে কারণে মাথায় আঘাত পেয়ে তোমার আজ এত
বড় একটা মস্তিষ্ক জনিত রোগ। মৃগী রোগ।
মনে মনে আমি তখন ছুটে দৌঁড়ে গিয়ে
আঁচল সামলে সিঁড়ি ভেঙে কোলে তুলে নিচ্ছিলাম তোমাকে।
তখন আমি অনায়াসে তোমার মা।
আমি বেঁচে থাকতে কখনো
আমার ছেলে কে চোখের আড়াল-ই হতে দিতেম না।
সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়া তো কত বড় ঘটনা!
তোমার এস. এস.সি. এইচ.এস.সি.'র রেজাল্ট
ভালো হওয়া না হওয়া
বিদেশে গিয়ে লেখা পড়া শেষ হওয়া না হওয়া
কোনো ভালো চাকরি হওয়া না হওয়া
এগুলো তে মন নেই তো আমার।
ওসব কত টাকা কামাই করা, কত বড় গাড়িদৌঁড়ে বেড়ানো , লোক দেখানো ব্র্যান্ড
এসব কিছু তে নেই তো আমি।
ছিলেম-ই না কখনো।
যখন হঠাৎ লোকেরা এসে বললো
তোমার-ই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু
যে- তোমার নাকি নারী-সঙ্গ দোষ আছে।
শুনে আমার একটুও বিশ্বেস হয়নি তো।
কেন হবে?
যখন কিছু দিন পর
আরেক নারীর পাঠানো চিঠি
তোমার সঙ্গে হোটেলে থাকার অন্তরঙ্গ
ছবি , সুইমিং পুলে , হেসে দাঁড়িয়ে
জড়িয়ে ধরে, ভালোবেসে, পানিতে ডুবে গিয়ে ,
সমুদ্রের বালুতে আঁকা নিজেদের প্রতিচ্ছবি।
তখনও তো বিশ্বেস হয়নি আমার!
কেন হবে!
যখন তোমার মেয়ে বান্ধবী আমাকে লিখে পাঠায়-
আমার সাথে বিয়ের মাস খানেক এর পর থেকেই তুমি নাকি
অসুখী।
অথচ। ...
ঠিক তক্ষুনি সেই মেয়ের চিঠি পড়তে পড়তে স্মৃতিতে আমার ভাসছে -
রাত জেগে তারা দেখতে দেখতে শব্দ-শব্দ খেলায়
যখন ভীষণ মজে গেছি। আমরা একদিন।
তুমি হঠাৎ খেলা থামিয়ে দুম করে জানতে চাইলে,
মরে গেলে আমি, আমার কবর কোথায় চাই।
যথার্থ কারণে আমার উত্তর টা ছিল "আমার বাবার পাশে।"
শুনে তুমি বললে, "আচ্ছা তাহলে তো আমাকে আমার বাপ-দাদার
পারিবারিক কবর ছেড়ে তোমার শহরে এসে কবর করতে হবে।"
আমার 'কেন' প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলে তুমি ,
"আমি কি করে থাকবো মৃত্যুর পর তোমাকে ছেড়ে আলাদা?
পৃথক দুটি শহরে। দুজনে ?"
তখন আমি মনেমনে, মস্তিষ্কে, মাথায়, হৃদয়ের রক্তপাতে ভেসে লাল ক্ষত- বিক্ষত স্মৃতি হাতড়িয়ে হিসেবে করছি। ..এ কথা টা তো তোমার বিয়ের এক বছরেরও পরে বলা...তাহলে বিয়ের কয়েক মাস পর....যা বলেছে মেয়েটা।...
পরে। কিছুদিন পর যখন জানা গেলো আমাকে নিয়ে যা- তা রটিয়ে বেড়াচ্ছ তুমি।
যা নয় তাও। যা ছিল গোপন। শুধু দুজনার তাও।
যা ছিল বিড়ম্বনার কিন্তু নিজস্ব আপন তাও।
যা ছিলোনা। কোনোদিন ঘটেনি। তাও।
তখন মনে মনে , বিশ্বাস করো
আমি কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম।
নিজের ভিতর ঢুকে পড়ে আরও আড়ষ্ট
হচ্ছিলাম এই বোধ থেকে নয় যে আমার কথা লোকে কি ভাববে।
লোকে কি ভাবছে।
বরং এই থেকে, এই বোধ থেকে যে
পৃথিবী তে যে মানুষটিকে সবচাইতে আপন, কাছের। সম্মানের।
আদরের। শ্রদ্ধার। বিশ্বাস এর উঁচু আসনে আমি বসিয়ে ছিলাম আমার মা বাবার পর।
বন্ধুত্বের। আহল্লাদের। অরণ্যের। নদীর।
একটা গড়িমসি অলস সকালের অভ্যস্ততার মতো করে।
উল্টো জামা ছেঁড়া টি-শার্ট পরে ঘরময় হেঁটে বেড়ানোর কিংবা না বেড়ানোর
মতো আরামের যে সহজ সুন্দর সম্পর্কের একটা মাঠে দিব্যি আমার মন
এক্কা দোক্কা খেলে বেড়াচ্ছিল।
সেই মানুষটাকে আমার চোখে এত টা নিচে নেমে যেতে দেখাটা আমি
বিশ্বেস করতে পারিনি। এ হতেই পারেনা!
যে মানুষ আমার সাথে দিনের পর দিন অন্য কে শ্রদ্ধা করার, সম্মান দেবার নানা রকম উদাহরণ নিজের অজান্তে দিয়ে গেছে। তাকে কি করে আমি ছোট হতে দেখতে পারি!
মাঝে মাঝে আমি আমার ঘর থেকে বেরুই। বেরিয়ে ঘরের সামনে খোলা আকাশের দিকে হা করে চেয়ে থাকি।
ঠিক যেমন টা হা করে শুনেছি আমি তোমার মুখে বলা স্বরচিত, মিথ্যে, আধা-মিথ্যে গল্প গুলো আমাকে নিয়ে।
আমি কোনো উত্তর পাইনি সেদিন। আজও পাইনা।
আকাশ শুধু আমার সামনে তার অনন্তের ক্যানভাসটা মেলে ধরে আমার অবাক হবার ব্যাপ্তিটুকু তুলে ধরে আমার সাথে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
হয়তো একেই বন্ধুত্ব বলে। হয়তো একেই সম্মান বলে। ভালোবাসা বলে।
নিঃশব্দে থেকে শুধু পাশাপাশি সহ- অবস্থান করে যে আপন হওয়া। তা সত্যি-ই কোথাও গিয়ে আকাশের মতো বিশাল একটা সম্পর্কই। বড্ড 'ক্লিশে' শোনায় যে কথা গুলো- সেগুলোই নতুন করে উপলব্ধি করছি।
"তুমি যদি আমার সাথে আমার মৌনতাই না ভাগাভাগি করে নিতে পারো ,
তাহলে তুমি আমার কথা গুলো , ভাবনা গুলো কিভাবে ভাগাভাগি করে নেবে?!"
নতুন করে জীবনকে যেন শিখছি, জানো?
মূল্যবোধ আশা-প্রত্যাশা। আদান-প্রদান। সমঝোতা।
এসব আবার হাঁটি হাঁটি পা পা করে শিশুর মতন শিখছি। এ এক নতুন বর্ণ পরিচয়ে, জানোতো ?
কি জানি আজকাল একটা শিশুকেও বিশ্বাস করতে ভয় পাই। কারো সঙ্গে বেশিক্ষণ সময় কাটাতে ভয় পাই।
কেউ আগ বাড়িয়ে কৌতূহল দেখালে গুটিয়ে যাই। দৌঁড়ে পালাই।
এসব গুটিয়ে চলতে চলতে। দৌঁড়ে পালাতে পালাতে যখন আবার নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াই । আকাশটার নিচে।
তখন একদিন হঠাৎ সন্ধ্যায় লক্ষ্য করি, আমার এই পালানোটা আসলে কার থেকে?
কিসের থেকে?
আমি তো আসলে তোমায় এখনো ভালোবাসি।
এখনো বুক জুড়ে সেই টনটন ব্যাথাটা একইরকম বিষ ছড়ায়। সুখ দেয়।
বুকের খাঁচা ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে চায় তোমার অবহেলিতো আমি। আমার আর্ত চিৎকার- "ভালোবাসি এখনও " ।
তবু এ স--ব কিছু ছাঁপিয়ে , সব কিছু উজাড় করে বাতাসে শুকনো কান্না, ভেজা শ্বাস মেলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকি।
দাঁড়িয়ে থেকে আমি দেখি। যা রয়ে গেছে ভিতরে, তা এখনো শুধুই এক অতি নিষ্পাপ প্রেম।
একটা সূক্ষ্ণ শুদ্ধ অনুভূতি। একটা স্বর্গ।
আর তাই বলেই হঠাৎ আমি আবিষ্কার করি, মনের ভিতর জুড়ে আমার বসবাস ক্ষমার।
কোনো জেদ নেই। ক্ষোভ নেই। অভিযোগ নেই। হিংসা-প্রতিহিংসা নেই। রাগ নেই।
দুঃখ নেই।
শুধুই ক্ষমা। আমি ক্ষমা করি আমাকে। তোমাকে। ওই অঞ্জন এর গান এর মতো মনে পড়ে-
"আমার আকাশ কুসম স্বপ্ন দেখার
খেলা থামেনি।
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!"
ক্ষমা করি এই অপ্রস্তুতির জন্য নিজেকে । ক্ষমা করি নিজেকে তোমাকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বোকা বোকা সব কান্ড-কীর্তি , কথা তৈরির জন্য। ক্ষমা করি আমি আমায়। ক্ষমা করি আমি তোমায়। যখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো তখন গিয়ে তো অন্য কে ক্ষমা করা যায়।
অক্সিজেন অন্য কে দেবার আগে নিজের ফুসফুসে তো আগে নিতে হয়, সেই অন্য কে বাঁচাবার প্রয়োজনেই।
তাই এই আমার ছোট্ট এক টুকরো পাহাড়ের, সমুদ্রের পাশের ঘর। এই ঘরের বাইরের মাঠে দাঁড়িয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে পাহাড় সমুদ্র সাক্ষী রেখে-
আমি ক্ষমা করছি আমাকে। আমি ক্ষমা করছি তোমাকে। আমি ক্ষমা করছি সকল প্রাণী। সকল মানুষ কে যারা আমাকে জেনে না জেনে কষ্ট দিয়েছে। আমি কষ্ট দিয়েছি। আমি কষ্ট পেয়েছি ভুল বুঝে।
ভালো থাকি আমি। ভালো থেকো তুমি। ভালো থেকো তোমরা। ভালো থাকুক তারা।
পৃথিবী উত্তাল হউক শুধু ভালোবাসায়। শুধুই আশীর্বাদে। শুভকামনায়। শান্তিতে।
প্রশান্তি তে। ক্ষমায়। মুক্তি তে।
আমীন।।
শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯
পুঁ ঝিক ঝিক
(১)
ট্রেনে যেতে যেতে কতই না গল্প পড়ে পড়ে , দেখে দেখে যাত্রাটা পাড়ি দেয়া যায়। শুধুই ট্রেন না অবশ্য। একটা ভ্রমণ মানেই কিন্তু তাই।এই যেমন আমি এখন ট্রেনে বসে আছি। ট্রেন আর আমি যাচ্ছি এ মুহূর্তে একটা গ্রামের ভিতর দিয়ে। বাংলার গ্রাম। যেমন হয়।
ট্রেনের জানালার পাশে বসে দুলকি চালের 'দোদুল দুল-দোদুল দুল' করতে করতে শরীরের ছন্দের সাথে সাথে মনটাও যে একটা ছন্দ নিয়ে নিজের মতো করে চারপাশটা পর্যবেক্ষন করতে করতে চলতে থাকে , এর একটা নিজস্ব বাৎসল্য আছে। একটা দর্শন আছে। দর্শনই বৈকি! সকল কিছু দর্শন করে করে যাওয়া। ট্রেনের এই এতটুকু জানালা দিয়ে আকাশ পানে দৃষ্টি দিতে এই এতটুকুন বেগ পেতে তো হয় না। এই মস্ত আকাশটা কি অবলীলায় ট্রেনের ছোট্ট জানালায় ধরা দেয় । কেমন ঝুঁকে মাথার ওপর বিশাল এক আদিগন্ত সামিয়ানা টাঙিয়ে রেখে আকাশটাও যেন দূ-রে কোথাও দিগন্তপানে চেয়ে থেকে, উদাস হয়।
আজ শরতের চৌদ্দ। আমার সিটের পাশে এই ছোট্ট জানালার বিশাল আকাশের ক্যানভাসে হুড়মুড় করে মেঘেরা পাল তুলে বেরিয়ে গেছে আকাশ সমুদ্র পাড়ি দিতে। আমি আয়েশ করে নাটক দেখতে বসলাম। যেন গ্রীকদেশের ওডিসিয়ুস আবার সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েছে। তবে এবার তার সাথে রয়েছে তার সেই বিশ্বস্ত বন্ধুরা, নাবিকেরা, যোদ্ধারা। কেউ নিহত হয়নি যেন। নৌবহরে তার পাশাপাশি আরো একটি শক্তিশালী যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে পাল তুলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে তালে তালে এগিয়ে চলেছে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র টেলেমাখুস ।টেলেমাখুস দাঁড়িয়ে আছে জাহাজের মাস্তুলের উপর এক পা রেখে আকাশ পানে মুখ পেতে। শরীরে তার নব্য যৌবনের পেশির উপস্থিতি । চোখে তার পিতার সাফল্যের গর্বের ঝিলিক তারই সাথে এত বছরের প্রতীক্ষিত মা এর ভালোবাসা বাড়ি ফেরার প্রশান্তি। চারপাশে আজ দামামা। কিন্তু এ দামামা যুদ্ধের নয়। শুধুই আনন্দের। প্রশান্তির। সুখের আর নিশ্চয়তার । আর ওডিসিয়ুসের নিজের নৌযানে আছে এবার তার প্রানপ্রিয় সঙ্গিনী পেনেলোপ। হঠাৎ দেখে যুদ্ধ বহর মনে হলেও আসলে তো তারা বেড়িয়েছে ভ্রমণে। দশ বছর পর ওডিসিয়ুসের ইথাকা প্রত্যাবর্তনের উৎসব উদযাপন। ওডিসিয়ুসের আর পেনেলোপের নৌযানের পাল গুলোর আকার দেয়া হয়েছে পেনেলোপ এর কেশের অনুকরণে। রাত জেগে উঁচু পাহাড়ের প্রাসাদে নিজ কক্ষের জানালা খুলে পাথরের কার্নিশে বসে জোৎস্নার চাঁদ আর নিচে অবস্থিত সমুদ্রের নীল জলের নোনা গন্ধে ভরা, ভারী হু হু বাতাসে যখন পেনেলোপ মেলে ধরতো তার হৃদয়ের আকুতি~ গুন্ গুন্ করে বিরহী গান ধরতো তার প্রাণ প্রিয় ওডিসিয়ুসের জন্যে। তখন তার দীর্ঘ সোনালী কেশরাশি বেদনার সুরে সুরে বাতাসে উড়ে উড়ে চুলের ডগায় ডগায় ভর করে, আকুতি জানাতো নিঝুম নির্জন রাত্তির কে। ওডিসিয়ুসের প্রতীক্ষায়। সেই মেঘসম কেশের অনুকরণে সেজেছে যেন মেঘেরই তৈরী নৌকোর পালেরা আজ। ওডিসিয়ুস ঠিক টের পেতো তার প্রিয় পেনোর বসে থাকাটা। সমুদ্র দেবতার অভিশাপে দিকশূণ্য নাবিকের মতো যখন অসহায় অস্থির ওডিসিয়ুস তারার আলোয় অন্ধকার সমুদ্রের দিকে মাঝরাত্তিরে শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকতো। তখন মনের চোখে সে ঠিক দেখতে পেতো পেনেলোপকে । এমন কি জ্ঞানের দেবী মহারূপসী এ্যাথেনার হঠাৎ মিষ্টি ধীর কণ্ঠের উপস্থিতিও ওডিসিয়ুসকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলিয়ে দিতে পারতোনা, বুক জুড়ে থাকা পেনোর উদাস বসে থাকার চিত্রটি। বরং এ্যাথেনার উপস্থিতি কি ভীষণভাবে আরও স্পষ্ট করে দিতো তার প্রাণের চাইতেও অধিক প্রিয় ভালোবাসার মানুষ পেনোর শূন্যতাটুকুকে ! চিরচেনা কণ্ঠের কান্নার সুরের মতো বাতাস হু হু করে বয়ে যেত ওডিসিয়ুসের নৌকোর পাল ঘেঁষে।
আজ এসব অতীত। ভাবতেই ওডিসিয়ুসের বুকের ভেতরটা ভেড়ার নরম উলের উষ্ণতার একটা ছোঁয়া পেলো যেন ।
... সেটাই । মহাকবি হোমার তার মহাকাব্যে এ দৃশ্য ধারণ করুন আর নাই বা করুন আমি-পাঠকের মনে আর চোখের সামনের আকাশমঞ্চে মহাকাব্য ওডিসির এই দৃশ্য এই মুহূর্তে কিন্তু স্বগর্বে স্বশরীরে উপস্থিত !
মজার ব্যাপার হচ্ছে আকাশের মেঘেরা যে গল্প বানায়। যে নাটকীয় দৃশ্যপটের আবির্ভাব ঘটায়, তা মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টায়। এর কোনো মাথা মুন্ডু নেই। নিয়ম নীতি নেই। আছে শুধুই শিশুর মতো স্বাধীনতা। আপন মনে খেলার ফূর্তি। খিল খিল হাসি। কান পাতলে, চাইলে সে শব্দ শোনাও যায়!
খিল খিল হাসি কথাটা মনে আসার সাথে সাথেই দেখি কোত্থেকে গ্রীক নৌবহরের লেজ ধরে নিজের লেজ নাচাতে নাচাতে এক দল সখি নিয়ে এসে দৃশ্যপটে উপস্থিত এক রাজকুমারী মৎস্যকন্যা। স্ফূর্তি দিয়ে অভিষেক হলেও, ধীরে ধীরে উচ্চ হর্ষ-বিকাশ কেবলই একটা হাসির দ্যুতির আমেজ হয়ে গা ভাসিয়ে আকাশ সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে আরম্ভ করলো। গোটা আকাশটা হঠাৎ কেবল একটা মিষ্টি মুচকি হাসির মুখচ্ছবি হয়ে ভেসে রইলো । দেখে আমিও মনে মনে না হেসে পারলাম না। পাছে আমার এই মনের স্ফূর্তি ঠোঁটে এসে পড়ে আর আমি সহযাত্রীদের কাছে "পাগলের সুখ মনে মনে" উপাধি পেয়ে যাই , তাই মনে মনেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি এবার মাটির দিকে চোখ ফেরাই । যত দূর দেখা যাচ্ছে শুধুই ধান ক্ষেত। কচি সবুজ ধানের ক্ষেতের ওপর থেকে থেকে ছায়া। থেকে থেকে রৌদ্র। আর মেঘ রৌদ্রের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। কি যে মজার এক দৃশ্য!
আবার খানিকটা গ্রাম পাড়ি দেবার পর নতুন গ্রাম। নতুন ধানক্ষেত। দেখি এখানে মেঘ আর সূর্য বৌচি খেলছে! সেটা কিরকম? দেখি বিশাল ধানি জমির ঠিক মাঝখানটাতে একটা ছোট্ট ছনের ঘর। কাঁচাপাকা সবুজের বিস্তীর্ণ ক্ষেতের ঠিক মধ্যখানে সোনালী খড়ের ছাউনি এবং বাদামি বেতের দেয়াল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ডিপ টিউবওয়েলের আবাসস্থল, এই ছনঘর। বৌচির বৌ তিনি। আর পুরো বিস্তীর্ণ ক্ষেত জুড়ে ছড়িয়ে আছে রৌদ্র।এক ঠায় তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।গতিবিধি বোঝার চেষ্টায়। এদিকে ঠিক ছোট্ট কুঁড়েঘরটির ওপর এক টুকরো মেঘ ছায়া হয়ে বসে আছে।এক্ষুনি যেন বুক ভর্তি দম দিয়ে ছুট দিবে রোদ্রের দলবলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আউট করার জন্য। দেখে এবার আমার ঠোঁট আর আকর্ণ বিস্তৃত না হয়ে থাকতে পারলোনা।
হেডফোনে রবীন্দ্রসংগীত এর অ্যালবামটা চালানো ছিল। যদিও অন্য গান বাজছে তবু মনের মধ্যে "আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরির খেলা রে ভাই ~ লুকোচুরির খেলা " কথাটা উঁকি দিলোই। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এমন কি কোনো মানবিক আবেগ কে বাদ দিয়েছেন তাঁর গানে, কবিতায়, ছোট গল্পে প্রবন্ধে অথবা উপন্যাসে ? যা-ই ভাবতে যাই না কেন ঠিক মনের আবেগ বুঝে বুঝে কোনো না কোনো গান, কোনো না কোনো কবিতা বা চরিত্রের ডায়ালগ ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় ! অদ্ভুত! সাধে কি আর এই লোকের প্রেমে পড়ি বার বার ! যে মনের ভিতর ঢুকে পড়ে জনসম্মুখে দাঁড়িয়ে মনের কথা বলে যান! যেমন সূক্ষতা বোধ তেমনই ভদ্রতাবোধের বলিহারি! মনের কথা অমন হড়বড় করে নির্দ্বিধায় লোকসম্মুখে বলা যায় নাকি ?! সেই তিনি-ই প্রথম শিখিয়ে দিলেন যে, যায়। আর এটাও একটা শিল্প।
আমার বন্ধু যূথী বলে, “ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ এসব লিখেছিল। কি সুন্দর প্রেমে পড়লে নিজের কথা সুরে সুরে বলে দেয়া যায় এ্যানোনিমাসলি“ সহেনা যাতনা দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে” । তবে লোকটা একটু অসভ্যই বটে । যখন তখন মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মনের সংবেদনশীল থেকে সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে দেয়! এর কোন মানে হয় ?! “
হঠাৎ করেই যূথীকে খুব মনে পড়ছে। ট্রেন তো ছুটছে একটা নির্দিষ্ট গতিবেগে। একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর আমার মন? ট্রেন, ট্রেন থেকে জানালা, জানালা থেকে আকাশ, আকাশ থেকে গ্রীসে, গ্রীস থেকে ধানক্ষেতে, ধানক্ষেত থেকে কিভাবে কিভাবে ময়মনসিংহে। যূথী বদলি হয়ে চাকরি সূত্রে এখন ময়মনসিংহে। বেশিদিন হয়নি গেছে। আচ্ছা মনের গতিবেগ প্রতি ন্যানোসেকেন্ডে কত আলোকবর্ষ পাড়ি দেয় ? তার কি কেউ সঠিক হিসেব জানে?
(২)
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে যুগ যুগ ধরে যে এক অধিবিদ্যার চর্চা চলে আসছে । নিজেকে জানার। নিজের অস্তিত্বকে বোঝার। নিজের সঙ্গে নিজের বসবাস করবার । নিজের ভিতরের নিজেকে সন্ধান করবার জন্য যে খনি, যে মায়া, যে মহাকাশ আমাদের নিজেদের ভেতরে, বিধাতা ছোট্ট একটা বীজের মতই আগুনের একটা ছোট্ট স্ফুলিঙ্গের মতই গুঁজে দিয়েছেন, তাকে চেনা, খনন করা, ফুঁ দিয়ে তাকে নেড়েচেড়ে দেখা, শ্রদ্ধা করে তাকে ভালবেসে, তার সাথে নিত্য নৈমিত্তিক বসবাস করবার যে নির্যাস আমরা চাইলেই পেতে পারি । সেই উৎস , সেই খনির খোঁজ আমরা কজন করি?
এই অধিবিদ্যার আধ্যাত্যবাদ এর একটা খুব মজার অংশ আমরা প্রায়-ই কিন্তু নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে নিজের অজান্তেই বহুবার উপলব্ধি করি । এ যেমন ধরা যাক টেলিপ্যাথি । যার বাংলা অর্থ অভিধানে খুব সহজ সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করা।
"Telepathy / noun/ বিশেষ্য / মন জানাজানি; শব্দের বা সংকেতের ব্যবহার না করিয়া ভাবধারার যোগাযোগ । "
এই মন জানাজানি বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত কিনা ! যার কথা মনে পড়ছে যাকে নিয়ে ভাবছি তারও ওপাশ থেকে বহুদূরে বসে আমার কথাই মনে পড়ছে । যেটা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোগাযোগ, মার সাথে তার শিশুর । তাঁর সন্তানের কোন অসন্তোষ কোন অসুবিধা কোন বিপদের অশনি সংকেত মা যেন কেমন করে টের পায়! স্বর্গের কোন দ্যূত চুপিচুপি এসে তাঁর কানেকানে ফিসফিস করে বলে যায় যেন! কিংবা যে নারীর ছেঁড়া ধন সেই নাড়িতেই কোথাও যেন কি টান পড়ে বলে, এরকমটা হয়?
আমার অভিজ্ঞতায় আমি এও দেখেছি পালক মা-রাও ঠিক একইরকম মন যোগাযোগ গুনের অধিকারী হন। আসলে যে মুহূর্ত থেকে একজন মা নিজেকে মা হিসেবে জানতে শুরু করেন তা গর্ভধারিণী হউন আর দত্তক নেয়া মাতৃকা হউন সবার বেলাতেই এক উপলব্ধি । মা দের সাথে বিধাতার স্বর্গের বা ভবিতব্যের এইযে এক নিঃশর্ত অলঙ্ঘনীয় একটা যোগাযোগ , এই যোগাযোগটি নিজেই তো একটি অতিপ্রাকৃত বিষয় ।
যা হরহামেশা আমাদের আটপৌরে জীবনে ঘটে চলেছে ।
আচ্ছা আমি একটু যূথীর সাথে টেলিপ্যাথি করে দেখবো? আমার কি চোখ বন্ধ করতে হবে? নাকি এমনি এমনি মনে মনে ওর কথা ভাবলেই হবে কিছুক্ষণ? ভাবলে কি ভাববো? প্রশ্ন করবো? নাকি ওকে এমনি কিছু বলবো?
- "যূথী, এই যূথী, তুই শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা? কেমন আছিস? কি করছিস ঠিক এ মুহূর্তে? তোর কথা খুব মনে পড়ছে রে । অনেকদিন কথা হয়না তোর সাথে। রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে তোর বিখ্যাত ডায়ালগ ও মনে পড়ল একটু আগে, জানিস তো? "(ব্যস আমার মন-জানাজানি বার্তা প্রেরণ করা শেষ।)
দেখি আদতে কিছু হয় কিনা । বহুবার তো কাকতালীয় ভাবে এর ওর সাথে টেলিপ্যাথি হয়েছে । দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছি সেই সাথে পেয়েছি আনন্দ-ও । এবার দেখি ইচ্ছে করে টেলিপ্যাথি করা যায় কিনা।
বলা হয় মহাবিশ্ব গোটাটাই বাস করে আমাদের ভিতর । যে কোন উত্তর, যে কোন মতামত নিতে সন্দিহান হলে শান্ত হয়ে বসে মনের জগতটাকে এক মনে শোনার জন্য কান পাতলেই বুদ্ধি, উত্তর, মতামত আমরা যে-যা-চাই সব মনের গহীন থেকে উঠে আসে ।
অনেকটা পুকুরের জলের উপরাংশে ঝাপাঝাপি করে, ঢিল ছুঁড়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয় জলের ত্বরণের। একটার পর একটা অনুরণন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়ে একে ওপরকে । পরপর এক একটা বৃত্তাকার ত্বরণ একটা নিজস্ব গতিতে, একটা পরিমেয় দূরত্বে আছড়ে আছড়ে গিয়ে পড়ে পুকুরের দেয়ালে । প্রথমে গতি থাকে দ্রুত, অস্থির, যেন এক্ষুনি পরপর পরপর ঢেউ গুলিকে ধাক্কা না দিলে তাঁর কিছুতেই হচ্ছেনা ।
তারপর ধীরে ধীরে গতি ধীর হয়ে আসে ত্বরণের । ধীরে জলের পৃষ্ঠতল কেমন শান্ত, স্থির হয়ে বসে পড়ে। ঠিক তখন জলের ওপর থেকে তাকিয়ে পুকুরের গভীরতা টুকু টের পাওয়া যায়। যেন পাতালের রহস্য নিজ থেকে উঠে এসে ধরা দেয় মানঃস্পটে । জলের তলদেশের শৈবাল, জলজ উদ্ভিদেরা, প্ল্যাঙ্কটন এমন কি পাতাল পুরীর নির্মোঘ তমসাও এসে নিজ অস্তিত্বের জানান দেয় শান্ত পুকুরের জলপৃষ্ঠে।
আমাদের মনটাও ঠিক তাই । আমরা মাঝেমাঝেই একে শান্ত করে কান পাততে পারি চাইলে। বোঝার জন্য। নিজের মনের অতলস্পর্শি নিরালোকের সাথে পরিচিতি পাবার জন্য । বহির্বিশ্বের কত অজানা তথ্য জানবার কতইনা নিস্পলক আগ্রহ আমাদের। অথচ নিজের মনটাকেই অমন শান্ত ধীর স্থির হয়ে বসে দেখি আমরা ক'জনা?
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯
এপিটাফ
তখন যেমন যেথায়-ই থাকুক না কেন সে। ঘন ছাইরঙা আকাশে উড়তে চাইতো তার চিল-মন।
আকাশের ছাই-মেঘ কালি-মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতো , তার চঞ্চল হৃদয়।
সম্ভব হলে এক ছুটে খোলা ছাদে। সিমেন্টের গরম মেঝের আঁচ সইতে সইতে পায়ের তলা। ঘন হয়ে আসা মেঘের বড় বড় দুরন্ত জল ফোঁটাদের দিকে মুখ করে, এক অস্তিত্ব পেতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সে। বৃষ্টি-আসি বৃষ্টি-আসি মুহূর্তে। তার ফুসফুস ভরে যেতো সোঁদা সুখের গন্ধে।
আর আবদারী কন্যার আহ্লাদী বাবার মত এক রাশ বৃষ্টি আনন্দ হয়ে নেমে আসতো ওর বুকে।
সবুজ - কচি কলাপাতা সবুজ।অথবা বটল গ্রীন। কিংবা দূর্বা সবুজ। জগতের সব সবুজ ছিল তার প্রিয়। এত প্রিয় যে নিজেকে অবলীলায় এক ঘন সবুজ অরণ্য মনে করতো সে মাঝে সাঁঝেই !
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যেদিন মেয়েটির বিশ্ব ব্রহ্মান্ড কে চমকে দিয়ে, ওর পৃথিবীর সবচাইতে প্রিয় কণ্ঠটি হঠাৎ বলে ওঠেছিলো,
"আমি আর তোমাকে চাইনা। হ্যাঁ , এতদিন একটা ভালোলাগা ছিল। তোমার দুরন্তপনা। শিশুসুলভ হাসি সব সহ্য করেছি আমি। কিন্তু জীবনটা তো শৈশব নয়। তোমার মতো ছেলে মানুষ নয়। সত্যি বলতে এসব আহ্লাদ তোমার বয়সের সাথে যায় কি?
আমি ভালবাসি আরেক পাখি কে। সে ধীর। স্থির। বেশ গোছানো। পরিপাটি। তোমার মতো নিজ জগতে ডুবে থাকা খামখেয়ালি অরণ্য নয়। নেই তার চোখে থেকে থেকে কোন উদাসপনা।
সে জানে একজন পুরুষ কি চায় তার কাছে।কি করে হাঁটতে হয়। থামতে হয়। হাসতে হয়। কি করে মিষ্টি সুরে চেনা গান গাইতে হয়। সে আমার ময়না পাখি।
নেই তার কোনো তোমার মত সত্য বলার কর্কশ অভ্যেস। সে জানে পুরুষকে পুরুষ নারীকে নারী বলা। লিঙ্গ হয়ে জীবন কাটাবার পদ্ধতি। জানে লিঙ্গের সামাজিক দায়িত্ব। এক পুরুষ এক নারীর কাছে যা চায় তা সে স্পষ্ট বোঝে। নিজেকে মানুষ বা পুরুষ কে মানুষ ভেবে , লিঙ্গের সমতা বা সমঅধিকার চর্চার কোনো অদ্ভুত জেদ নেই তার। নেই বাড়ি-না-গড়ে, গাড়ি-না-চড়ে নৌকো বানানোর এক উদ্ভট পাগলামি ! নেই তার জীবনের কোনো অবাস্তব শ্লোগান তোমার মতন। এই যেমনটা তুমি আওড়াও -
'কেয়া পাতার নৌকো গড়ে
সাজিয়ে নেবো ফুলে
খরস্রোতে ভাসবো মোরা
চলবো দুলে দূলে। '
আমার পাখি সমাজ চেনে। আচার মানে। অর্থনীতির সংসার জানে।"
-প্রিয় কণ্ঠে ফুটে ওঠেছিলো শখের পুতুল কিনতে পাবার অহংকার সেদিন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
অথচ মেয়েটিকে কিন্তু জলের খোঁজ দিয়েছিলো ছেলেটি নিজেই। মেয়েটি গ্রাম অতো ভালো চিনতো না। ছেলেটি জানিয়েছিলো -
"তোমাকে একবার বর্ষা দেখাবো। আমাদের গাঁয়ে বর্ষা এলে পদ্মফুলে ছেয়ে যায় অঞ্চল। নৌকো বোঝাই করে আমরা শাপলা শালুক তুলতে যাই দল বেঁধে। সে গাঁয়ের ছেলে আমি।"
( আর যা শোনেনি মেয়েটি। কিন্তু কল্পনায় ভেসে উঠছিলো তার-ই নিজস্ব অরণ্যের গাছগুলো। দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। সারিসারি।বিলের জলের ওপর ঝুঁকে পড়ে ছায়া সুনিবিড় এক মায়া বিছিয়ে রেখেছে তারই চির চেনা ডালপাতারা । মাথার ওপর এক দিগন্ত আকাশ নির্নিমেষ। কাছে পিঠে একটা ডাহুক ডাকলো কি? নৌকোর গলুইয়ে মাথা রেখে চোখ বুজে, দিব্যি শুনতে পেলো মেয়েটি বৈঠের ডাক। ছলাৎ ! ছলাৎ ! )
"নেবে ? আমায় নৌকো করে ?
তোমার পদ্মগাঁয়ে ? শাপলা বিলে ? আমি শাড়ী। একটা এলোখোঁপা।
আর বুক ভর্তি নরম বাতাস।
নেবে আমায় ?"
উত্তরে ছেলেটি, কাছে এসে চকিতে ওর অধর ছুঁয়ে ছিলো। ( শুধু কি অধর? ছেলেটির ওষ্ঠের উত্তাপে গলে গলে যাচ্ছিলো মেয়েটির পায়ের তলার শক্ত মাটি। অরণ্যে লেগেছিলো কি অদ্ভুত হাওয়া! বেজে উঠলো অচিন পুরের গান। ভেঙে ভেঙে ঢুলে পড়ছিলো খোঁপা। মুদে আসছিলো চোখ। ডাহুকটা ঘন হয়ে বসেছিল ডালে। )
শুনিয়েছিলো গান -
" প্রাণো বন্ধুরে -
কাষ্ঠে লোহায় পীরিত করে
নৌকারে সাজাইয়া গো 'পরে
দুই -এ মিলে যুক্তি করে শুকনাতে থাকবে না।
এখন জলের তরে ভাসে পীরিত রে বন্ধু
জল বিনে সে বাঁচে নারে বাঁচে না
মন জানে আর কেহ জানেনা ।। "-
সেই সেদিন থেকে মেয়েটি ওর আঁচলে বেঁধে নিলো এক অঞ্চল। শাপলা আর পদ্ম বোনা সূক্ষ্ম সূতোর রঙিন আবেগ। পাশে থাকে একটা ছই নৌকো।
যখন যেমন ডাক আসবে সে খোলা আঁচলে এলোখোঁপায়, নৌকোয় পা রাখবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সবুজ রঙ ভালোবাসতো মেয়েটি।
এক আকাশভাঙ্গা জেদি ঝড় এলো ছাদ জুড়ে সেদিন।
"তোমাকে আমি আর চাইনা।
অরণ্য চাইনা।
সারল্য চাইনা।
অমন অধর চাইনা।"
কথাগুলো আছড়ে এসে পড়ছিলো বুকে। বৃষ্টি এসে গা ঝাঁকিয়ে সুঁই ফুটিয়ে ঝাঁঝরা করে দিতে দিতে চলে গেলো ।
বলে গেলো - নদী মিথ্যে।
ঝিল মিথ্যে।
পদ্ম'র ঝোঁপ মিথ্যে।
বলে গেলো- ভালবাসা বলে কিছু নেই।
কিচ্ছু নেই।
বিশ্বাসে বুক বাঁধেনা আজকাল
হাঁদারাম ও।
শুধু থেকে গেলো সেই গল গল গলে যাওয়া পায়ের তলার মাটি।
তার তলে চোরাবালি। থেকে গেলো টান !
তার তলে চোরাবালি। থেকে গেলো টান !
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
মনে করো , মেয়েটি একটা চোরাবালির ফাঁদ। নিজে তো নয়-ই স্বপ্ন গুলোকেও আর বাঁচাতে পারছেনা তার অতল টানে।
মনে করো, মেয়েটি বসেছিলো ছাদের মেঝেয়। বৃষ্টি এলো।
মুখ ডুবোলো সে তার অরণ্যের আঁচলে।
কিন্তু আঁচল কোথায়? এ তো প্রতারণার জাল।
আঁচলের নৌকোখানি
কাগজের নৌকো হয়ে
ভেসে যায় জলের তরে।
ভাসতে ভাসতে ছিঁড়ে যায়। ছিঁড়ে যাচ্ছে ফুল। পাঁপড়িগুলো। ছিঁড়ে যাচ্ছে অঞ্চল।
তাচ্ছিল্ল্যের সুরে সুরে পৃথক।
আলাদা করে চেনা যায়না।
সে ছলনা? না সোহাগ?
কে প্রতিশ্রুতি। আর কে প্রতারণা।
সে পদ্ম? না শাপলা?
কি আসে যায়?
সে ছলনা? না সোহাগ?
কে প্রতিশ্রুতি। আর কে প্রতারণা।
সে পদ্ম? না শাপলা?
কি আসে যায়?
সেই তো মিথ্যে।
মিথ্যে পদ্ম।
মিথ্যে নীল।
মিথ্যে স্বপ্ন।
মিথ্যে মানুষ।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
মেয়েটি বড্ডো মানুষ ভালোবাসতো।হৈ চৈ। হাসি গান। আড্ডা।
আজ তার যত মানুষে আপত্তি!
মেয়েটি বড্ডো সবুজ ভালোবাসতো। আজকাল কিছু ঘাস, কিছু শ্যাঁওলা, কিছু ফণিমনসারা আগলে রাখে ওকে ।
মেয়েটি বৃষ্টি ভালোবাসতো বলে মেঘেরা আজ ডানা মেলে ছায়া দেয়।আঁজলা ভরে বৃষ্টি আনে। এই সবকিছু ছাঁপিয়ে ভালোবাসতো ও সেই কণ্ঠ আর তার গান । যে ঘোর কাটেনি ওর কোনোদিন।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
তুমি এই এখানটাতে এসে, একটু বসো।
টের পাচ্ছো ওর অস্তিত্ব ?
শ্শ্শ ! কান পাতো সাবধানে।
শুনতে পাচ্ছো ? গুন্ গুন্ ? ...
"আশা ছিল মনে মনে
প্রেম করিমু তোমার সনে
তোমায় নিয়া ঘর বান্ধিমু
গহীন বালুর চরে গো,
গহীন বালুর চরে গো,
গহীন বালুর চরে।
সেই ঘরেতে তোমার আমার
মধুর মিলন হইতো,
তোমার শাড়ীর আঁচলেতে
পরাণ বান্ধা রইতো।
রঙ্গিন কাঁথায় থাকতাম শুইয়া তোমায় বুকে লইয়া,
চাঁদের আলোয় রাইত পোহাইতাম কথা কইয়া কইয়া।
সেই সুখের স্বপন চোখে ভাসে
পরাণ উদাস করে গো ...
গহীন বালুর চরে।
তোমার প্রেমের একটু পরশ
গায়ে যদি লাগতো
ব্যথায় পোড়া বুকেতে এক
সুখের সাগর জাগতো
গায়ে যদি লাগতো
ব্যথায় পোড়া বুকেতে এক
সুখের সাগর জাগতো
তোমার কথা ভাইবা মরি
নৌকা বাইতে বাইতে
কানাকড়ি চাইনা, আহা
তোমারে চাই পাইতে
সেই বালুর চরে কাটতো জীবন
মরণেরও পরে গো ...
গহীন বালুর চরে।।
( গান ১: আমার মন জানে আর কেহ জানে না
লোকগীতি, সংগৃহীত
কৃতজ্ঞতা : তাসনুভা তাবাস্সুম
গান ২ : আশা ছিল মনে মনে
শিল্পী : সুবীর নন্দী
গীতিকার: জহির রায়হান এবং আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
সুরকার: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
চলচ্চিত্র : হাজার বছর ধরে )
( গান ১: আমার মন জানে আর কেহ জানে না
লোকগীতি, সংগৃহীত
কৃতজ্ঞতা : তাসনুভা তাবাস্সুম
গান ২ : আশা ছিল মনে মনে
শিল্পী : সুবীর নন্দী
গীতিকার: জহির রায়হান এবং আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
সুরকার: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
চলচ্চিত্র : হাজার বছর ধরে )
বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯
এইসব আর কি ...
ভালবাসা মানে একা রোদ্দূরে ভেজা
কাকেদের সারি,
চিকন ধূলোয়, ভীড় ভাট্টায়
রিক্সা-পাখি,
শিশু বিস্ময়ে চেনা রংধনু,
ভাঙ্গা শব্দ,
মোড়া মেঘ,
ঘাসের চূড়োয়,
শীত জ্যোৎস্নায়
একা একলা,
নিজেই নিজের দুঃখ ভোলা ।।
কাকেদের সারি,
চিকন ধূলোয়, ভীড় ভাট্টায়
রিক্সা-পাখি,
শিশু বিস্ময়ে চেনা রংধনু,
ভাঙ্গা শব্দ,
মোড়া মেঘ,
ঘাসের চূড়োয়,
শীত জ্যোৎস্নায়
একা একলা,
নিজেই নিজের দুঃখ ভোলা ।।
বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯
নিজেকে খুঁজছো? পাবে।
বুকের ভেতর যে নদী থাকে
থাকে বলেই কি ওতে ডুবতে জানতে হবে?
ভাসতে জানতে হবে?
এমনি এমনি অকারণে
উচাটন মনে ওর তীরে বসতে যেতে
নেই বুঝি?
তোমার যে চিলেকোঠা
ওর হিসেব কেবলই ছাদের বুঝি?
ওই মস্ত এক হ্যাংলা আকাশ
কেমন অযাচিতো
মুখের ওপর বুকের ‘পরে
ঝুঁকে পড়ে
দেখে তোমার বসন বাসন
তোমার সহবাস ।
তার ওপর তোমার কোন দাবী নেই বুঝি?
আর কত উদাসপনা
আর কত খামখেয়ালী
এবার তুমি একটু ভাবো
দেখো এবার কেউ যেন আর
না আদায় করে
অকপটে মিথ্যে দাবী।
যে গিয়েছে
গাল দিয়েছে
মিছেমিছি
কেড়ে নিয়েছে
মনের যত সূক্ষ আবেগ
আহ্লাদী
উদাসী বেলুন,
ফানুস বলে
উড়িয়ে দিল
তোমার যত্নে পোষা
অস্তিত্বের উপস্হিতি।
তাকে এবার ক্ষমা করো।
রাগ গোস্যা আঁচল টেনে
গুছিয়ে আনো।
সিড়ি ভেঙ্গে তে-তলায় যাও।
ছাদের ঘরে বাক্স খোল
আদুরে স্মৃতির চিঠির পাতায়
গন্ধ নাও বুক ভরে
তারও আগে
বলছি তোমায়।
দরজা ভেজাও
ছিটকিনিটা তোল
বলি অনেক হল অযাচিতো
এবার দুয়ার সাঁটো
গুছিয়ে বসো
আরাম করে পাখার তলে
নিজ জীবনে
নিজ তীরেতে পা ভিজিয়ে
কাশের ফুলের
অমন অগোছালো
গড়ন দেখো
পাগল হও
একলা হাসো
ভালবাসো
নিজের মনের মহাকাশে
নক্ষত্রদের স্ফূলন দেখো।
আমি বলছি
ভাল থাকবে।
নিজেকে পাবে।
একা হবে
একাত্নতায়
আলিঙ্গনে।
স্বস্তি নিয়ে।
নদীতে ঠিক ঢেউ খেলবে।
খেলতে হবেই।।
থাকে বলেই কি ওতে ডুবতে জানতে হবে?
ভাসতে জানতে হবে?
এমনি এমনি অকারণে
উচাটন মনে ওর তীরে বসতে যেতে
নেই বুঝি?
তোমার যে চিলেকোঠা
ওর হিসেব কেবলই ছাদের বুঝি?
ওই মস্ত এক হ্যাংলা আকাশ
কেমন অযাচিতো
মুখের ওপর বুকের ‘পরে
ঝুঁকে পড়ে
দেখে তোমার বসন বাসন
তোমার সহবাস ।
তার ওপর তোমার কোন দাবী নেই বুঝি?
আর কত উদাসপনা
আর কত খামখেয়ালী
এবার তুমি একটু ভাবো
দেখো এবার কেউ যেন আর
না আদায় করে
অকপটে মিথ্যে দাবী।
যে গিয়েছে
গাল দিয়েছে
মিছেমিছি
কেড়ে নিয়েছে
মনের যত সূক্ষ আবেগ
আহ্লাদী
উদাসী বেলুন,
ফানুস বলে
উড়িয়ে দিল
তোমার যত্নে পোষা
অস্তিত্বের উপস্হিতি।
তাকে এবার ক্ষমা করো।
রাগ গোস্যা আঁচল টেনে
গুছিয়ে আনো।
সিড়ি ভেঙ্গে তে-তলায় যাও।
ছাদের ঘরে বাক্স খোল
আদুরে স্মৃতির চিঠির পাতায়
গন্ধ নাও বুক ভরে
তারও আগে
বলছি তোমায়।
দরজা ভেজাও
ছিটকিনিটা তোল
বলি অনেক হল অযাচিতো
এবার দুয়ার সাঁটো
গুছিয়ে বসো
আরাম করে পাখার তলে
নিজ জীবনে
নিজ তীরেতে পা ভিজিয়ে
কাশের ফুলের
অমন অগোছালো
গড়ন দেখো
পাগল হও
একলা হাসো
ভালবাসো
নিজের মনের মহাকাশে
নক্ষত্রদের স্ফূলন দেখো।
আমি বলছি
ভাল থাকবে।
নিজেকে পাবে।
একা হবে
একাত্নতায়
আলিঙ্গনে।
স্বস্তি নিয়ে।
নদীতে ঠিক ঢেউ খেলবে।
খেলতে হবেই।।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)