শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

একটি দোলনার আত্মকথন (শেষ)

মাঝে মাঝে দোল খেতে আসা ছোটদের দল যখন আমার বুকের ওপর চড়ে বসে, আর একে অপরকে দোল দেয়। তখন আমার সর্বাঙ্গ জেগে ওঠে আনন্দে। আমার দড়ির প্রতিটি সূতো, আমার কাঠের পিড়ির প্রতিটি কোষ শিশুদের হৃদছন্দে নেচে ওঠে।
কখনও ওরা  দুজন সঙ্গী মিলে উঠে দাঁড়িয়ে দোল খায়। আমাকে ছোট্ট হাতের মুঠি দিয়ে শক্ত করে ধরে। আর প্রচন্ড দাপটে উড়ে উড়ে একসঙ্গে আমি আর ওরা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলি। তখনই বোধহয়, আমি আমার জন্মের সার্থকতা টের পাই। শৈশব কৈশোরের অনাবিল উদ্দীপনায় খুঁজে পাই নিজেকে। হারিয়ে যাই আমি !

খিলখিল হাসির ফাঁকে ওদের চোখের কোণে যে নিষ্পাপ আলোর ঝিলিক দেখা দেয়, আমাকে অবাক করে দিয়ে আমারও আগে সেই আলোর প্রতিফলন ঘটায়, আমারই প্রতিবেশী ডোবার জল ! শরতের বাতাস গায়ে মেখে ঝিলিমিলি আল্পনা এঁকে, দিব্যি শিশুদের আনন্দের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে দেয়, নিঃস্বার্থ জলাভূমি।

এই সবান্ধব জলার ঝিলমিল আঁকিবুকিতে, বাচ্চাদের কন্ঠের সেই অচীনপুরের সারল্যে, শরতের মেঘতুলিতে  পাখামেলা সাদা সারস আর চিরন্তন দিগন্তের ধোঁয়াটে নীলে, ভেসে যেতে যেতে আমি চোখ মেলি।

দূরে যতদূরে চোখ যায় অথবা যায়না।
 কিন্তু আমরা ভেবে নিতে ভালবাসি যে- যায়।
আমাদের দৃষ্টি ঠিক পৌঁছোয়।
অসীমের দেখা পায়!

আমি সেই ভেবে-নেয়া অসীমের দিকে চেয়ে থাকি। আর বাচ্চাদের সাথে আকাশ ছুঁতে ছুঁতে আমি টের পাই- আমার চারপাশটা ক্রমশ ঝাপসা থেকে ঝাপসা হচ্ছে। আমার শরীর হালকা হচ্ছে। আমি চকিতে পেলব পালক হয়ে ভাসছি ।

আমি চোখে দেখি সবুজ। কিংবা হয়তো দেখিনা।
চোখ বুজি।
বোজা চোখে দেখি কালচে বাদামী। কালচে সবুজ। কচি সবুজ। কিংবা দেখিনা। দেখি হলুদ, দেখি হলদেটে, দেখি নীল। হয়তো দেখিনা।
 আমি নীল।
আমি দিগন্ত।
আমি সেই দূর।
 দূর থেকে আরও দূর।
দিগন্তের বিন্দু।  তারও আরও দূরে শূন্যে মিলায় বিন্দু , যতদূর।
তারও আরও পরে যেতে যেতে যেতে ~

 শূন্য ছাঁপিয়ে ... আমি হই বিলীন ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন